বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিশেষায়িত ইউনিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠকে এই স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় আহত শিক্ষার্থীসহ সবার চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কয়েকটি নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, আহত ছাত্র-জনতা যেহেতু বিভিন্ন ধরনের ইনজুরিতে ভুগছেন এবং তাদের অনেকেরই অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাই তাদের অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্পেশালাইজড বিভাগে চিকিৎসক নার্স এবং রোগীর বৈধ প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
ইউনিটে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালকের সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করা, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই হাজার ২০০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এ মুহূর্তে আইসিইউতে রয়েছে নয়জন। এছাড়া হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনাসহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের।
কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে জুলাইয়ের শুরু থেকে। গত ১৬ জুলাইতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
এক পর্যায়ে আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় গিয়ে পৌঁছে। তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।
পুরো আন্দোলনে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বা কতজন আহত, সে বিষয়ে এখনও কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের পররবর্তী সময়ে অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৈঠকে সারজিস আলম বলেন, সরকারি হাসপাতালে আহতে রোগী অনেক, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল অথবা কোনও ক্লিনিকে আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীনদের কাছ থেকে বিল না নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এরই মধ্যে যারা আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ব্যাপারে খোঁজখবর করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে। কমিটির সদস্যরা তাদের কর্মপন্থা ঠিক করতে রবিবার বৈঠক করবেন।