জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরনো ভবনে আগেও এসেছেন অনেকবার। কিন্তু শনিবার গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান এলেন নীরবে। লাশবাহী গাড়িতে। কফিনে মোড়ানো।
দেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে। ক্রীড়া পরিষদ চত্বরেই হয়েছে জিয়ার জানাজা।
সকাল সোয়া এগারোটায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিচে জিয়ার লাশবাহী গাড়ি পৌঁছায়। তাকে শেষবারের মতো দেখতে ছুটে এসেছিলেন দাবা অঙ্গনের অনেকেই। জিয়ার পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতার গণ্ডি দাবা ছাড়িয়ে সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনেই ছিল।
তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, দাবা ফেডারেশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করলেও জিয়ার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন ফেডারেশনের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা।অথচ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকার সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ফেডারেশন ফুটবল (বাফুফে) থেকে কাউকে দেখা যায়নি।
জানাজা শেষে বাবা পয়গম আহমেদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া।
দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম জিয়ার চলে যাওয়াকে কিছুতেই মানতে পারছেন না। দেশের দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন তিনি, “অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনো এরকম ছিলেন না। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে।”
জিয়ার স্মৃতি ফেডারেশনে ধরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে এই কর্মকর্তার, “আমাদের আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যতদিন না হয় আমরা বর্তমান ক্রীড়াকক্ষই জিয়ার নামকরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেও পেশা হিসেবে চাকরিকে বেছে নেননি জিয়া। দাবা খেলে এবং কোচিং করিয়ে পরিবার চালিয়েছেন। তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য বিসিএস ক্যাডারে প্রশাসনে যোগ দেননি স্বামীর প্রতি দাবাপ্রেমের জন্য। একমাত্র ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও ফিদে মাস্টার। বাবা-ছেলে অলিম্পিয়াড খেলেছেন। জিয়া ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
জিয়ার জানাজায় এসে তার পরিবারের পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, “জিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব দাবা অঙ্গনে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন আর্থিক ব্যাপারে তার পরিবারের পাশে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও জিয়ার পরিবারের জন্য আর্থিক-অনার্থিক যেকোনো প্রয়োজনে এগিয়ে আসব।”
দাবা ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, “গতকাল মাননীয় মন্ত্রী (নাজমুল হাসান পাপন) এবং আজ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের আরেকজন অভিভাবক শাহেদ ভাই (বিওএ মহাসচিব) তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। একটি বড় আর্থিক অঙ্ক স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করে পরিবারের একটি সাপোর্ট প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দাবা ফেডারেশন ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে নেব।”
জিয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে খেলেছিলেন। জানাজায় আনসারের ক্রীড়া কর্মকর্তাও প্রতিষ্ঠানের বিধি অনুযায়ী জিয়ার সাহায্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টার আব্দুল্লাহ আল রাকিব। মায়ের মৃত্যুর পর তিনি দাবা অঙ্গন থেকে দূরে। প্রায় দুই বছর পর আবারও এই আঙিনায় এসেছেন অগ্রজ জিয়াকে শেষবারের মতো দেখতে। রাকিব সরাসরিই বললেন জিয়া দেশের সেরা দাবাড়ু, “বাংলাদেশের সেরা দাবাড়ু জিয়া ভাই। তার শূন্যস্থান পূরণ করার মতো নয়। একজন অতি সুশৃঙ্খল খেলোয়াড় ছিলেন। সব সময় খেলা নিয়ে ভাবতেন। অলিম্পিয়াডে অনেক খেলেছি একসঙ্গে। দেখেছি প্রতিপক্ষ নিয়ে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ।”