Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরুর প্রত্যয় প্রধান বিচারপতির

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে।

সোমবার সকালে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় আদালতকক্ষ ছিল আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ।

অভ্যূত্থানে নিহত ছাত্র-জনতাকে গভীরভাবে স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা আমি পালন করে যাব। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে।”

এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি সততা-দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদের মুখে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওবায়দুল হাসান। একে একে পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি।

এরপর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। রবিবার তিনি শপথ নেন।

হাইকোর্ট বিভাগ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সরাসরি প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রেফাত আহমেদের এই নিয়োগ বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।

প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আপনাকে রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ দেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এদেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাঁথা উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল।

“বিপ্লবোত্তর যে কোনও দেশে রাজপথ কিংবা রণাঙ্গন সে দেশের নেতা ঠিক করে দেয়। আমাদের দেশের বীর ছাত্ররা, তাদের পাশে থাকা অভিভাবকেরা, তাদের শুভাকাঙ্খীরা রাজপথ থেকে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি তুলেছিল। এ ভালোবাসা বিরল, এ ভালোবাসা অমূল্য, এ ভালোবাসা নিয়ে গর্ব করতেই পারি, তাই না?”

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, গায়েবি মামলায় আসামি হওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় নির্যাতিত মানুষ ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “গোটা দেশবাসীর মত আমিও আশা করি আপনি তাদের বিমুখ করবেন না।”

মানুষের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আশা করি আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।”

বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হবে, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভিতর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সব দুর্নীতি নির্মূলের প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি।

প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের বিচারাঙ্গণের জন্য আপনি প্রমিথিউস হোন, আপনার কর্মফলে নতুন বাংলাদেশ আঁকা হোক-ভ্যানগগ কিংবা পিকাসোর রং তুলিতে নয়, বরং সৈয়দ রেফাত আহমেদের টিমের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা আর হৃদয় উৎসারিত ভালোবাসার নৈবেদ্য নিবেদনের মাধ্যমে।”

সংবর্ধনা সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “বিগত দিনে বিচার বিভাগকে ক্রমান্বয়ে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ করে রাখার মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

“আমরা দেখেছি কিভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র জনতার যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিচার বিভাগকে জনরোষের মধ্যে ফেলে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আশা করি না।”

রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করার প্রতিও দাবি জানান তিনি।

এর আগে সোমবার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত