Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

কেমন শাসক হবেন কিয়ার স্টারমার

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। ১৪ বছর পর দলটি ফিরল ক্ষমতায়। েভাটে হেরে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। যাত্রা শুরু করেছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বা শাসক হিসাবে স্টারমার কেমন হবেন, তা এখনই অনুমান করা মুশকিল। তবে সহকর্মীরা যারা স্টারমারকে তার রাজনীতিতে প্রবেশের আগে থেকেই চিনতেন, তাদের কথায় একটা ধারণা পাওয়া যায়।

এই সহকর্মীরা বলছেন, স্টারমার কীভাবে শাসন করবেন তার ইঙ্গিত একজন অ্যাটর্নি হিসাবে তার কর্মজীবন থেকে পাওয়া যাবে।

তারা বলেন, স্টারমার কখনোই একজন ‘জুরির আইনজীবী’ ছিলেন না। অর্থাৎ, তিনি কোনও নাটকীয়তা এবং আবেগপূর্ণ সমাপনী যুক্তি তৈরি করতেন না। তিনি বরং একজন ‘বিচারকের আইনজীবী’ ছিলেন। যিনি অতীত নজির, আইন ও তথ্য দিয়ে মামলার যুক্তি-তর্ক তৈরি করতেন।

স্টারমার যখন পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করতেন, তখনও তিনি আইনজীবীর মতোই কথা বলতেন। তার জেরা এমনকি বরিস জনসনের ‘বোমাবাজি’কেও বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হতো।

লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার এরই মধ্যে তার নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন।

স্টারমার কর্মজীবনের প্রথম দিকে ডউটি স্ট্রিট চেম্বার্সে যোগ দিয়েছিলেন, যা বড় বড় বিতর্কিত মানবাধিকার মামলা নেওয়ার জন্য পরিচিত। তিনি কমনওয়েলথ দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে ‘শিশু হত্যাকারী এবং কুড়াল দিয়ে হত্যাকারীদের’ রক্ষার অভিযোগও ওঠেছিল।

স্টারমার নিরামিশাষী নৈরাজ্যবাদীদের পক্ষেও কাজ করেছিলেন, যারা ম্যাকডোনাল্ডসের বিরুদ্ধে কম মজুরি, পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং বন উজাড়ের অভিযোগ এনে লিফলেট ছড়িয়েছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। মামলাটি এবং এর অনেকগুলো আপিল এক দশক ধরে চলে, যা ব্রিটিশ ইতিহাসের দীর্ঘতম আইনি লড়াইগুলোর মধ্যে একটি। মামলাটি এক ধরনের ড্রয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

২০১১ সালে মার্ক ডুগান নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করার পর লন্ডনে যারা দাঙ্গা বাঁধিয়েছিল, তাদের গ্রেপ্তার এবং অভিযুক্ত করায় স্টারমার এবং তার কৌঁসুলিরা পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল।

সমালোচকরা আবার স্টারমারকে রাজনীতিতে একজন ‘সুবিধাবাদী’ হিসাবে দেখেন। তিনি তার দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গেও আপস করেছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

একটি মধ্য-বামপন্থী দল হওয়া সত্ত্বেও এবার লেবার শতকোটিপতি তার নির্বাচনী তহবিলে অর্থ দিয়েছেন।

বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ী জন কডওয়েল বিবিসিকে বলেন, “কিয়ার স্টারমার যা করেছেন, তা হল লেবার পার্টি থেকে সব বামপন্থীকে সরিয়ে দিয়েছেন।

“ব্রিটেনের উন্নতির জন্য তিনি যেসব মূল্যবোধ ও নীতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন, তা একজন বাণিজ্যিক পুঁজিবাদী হিসাবে আমার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও সম্পূর্ণ মিলে যায়।”

স্টারমারের সমর্থকদের আশা, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মতো একজন পরিবর্তনকামী নেতা হবেন।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ টনি ট্র্যাভার্স বলেছেন, “আমি মনে করি, তিনি (স্টারমার) প্রমাণ করেছেন যে তিনি তার দলকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ নির্মম।”

কিন্তু সেই নির্মমতা কি সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? “আমাদের অপেক্ষা করতে এবং দেখতে হবে,” বলেন ট্র্যাভার্স।

স্টারমার কী বিশ্বাস করেন? মধ্যপন্থী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লেবার টুগেদার পরিচালক জোশ সিমন্স বলেন, “তিনি বাস্তববাদে বিশ্বাস করেন। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নীতি তৈরিতে বিশ্বাস করেন, কোনও মহা তত্ত্বের মাধ্যমে নয়। এবং তিনি মতাদর্শগত পূর্বানুমান নিয়ে টেবিলে আসেন না।”

ভিন্ন অঙ্গনে স্টারমার সমর্থন পেলেও নিজ দলের বিরোধীরা তার কড়া সমালোচক।

লেবার পার্টির সাবেক পরিচালক জেমস স্নাইডার বলেন, “আমি মনে করি তার আসলে নিজের কোনও ভিশন নেই। তিনি তার চারপাশে থাকা লোকদের ধারণা দিয়ে প্রভাবিত বলে মনে হচ্ছে।

“তিনি এস্টাবলিশমেন্ট বা সমাজের ক্ষমতাবান শ্রেণির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে নয়, পুনরুদ্ধার করতে এসেছেন। তাকে একজন মধ্যবর্তী ম্যানেজার মনে হয়, যিনি তার কর্মীদের নিপীড়ন করেন; বা একজন অজনপ্রিয় সৎ বাবা, যিনি বাচ্চাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন।”

রাজা চার্লসের সঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

বামপন্থী সমালোচকদের সন্দেহ, স্টারমার সাহসী হবেন না, বরং একজন নমনীয় মধ্যপন্থী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন।

স্টারমারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি— ব্রিটিশ অর্থনীতিকে তীরে তোলার চেষ্টা করা এবং জনগণের এই ধারণাকে মোকাবেলা করা যে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।

তিনি ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের খরচ কমাতে চান একটি নতুন রাষ্ট্রীয় গ্রিন ইউটিলিটি কোম্পানির মাধ্যমে। তিনি মেডিকেল এবং ডেন্টাল অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষার সময় কমাতে চান।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র নীতি নতুন সরকারের অধীনে খুব কমই পরিবর্তিত হয়।

ট্র্যাভার্স বলেছেন, রক্ষণশীল থেকে লেবারদের শাসনে আসার পরও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতি ‘আশ্চর্যজনকভাবে অপরিবর্তিত’ থাকবে।

স্টারমার বলেছেন, ব্রিটেন ন্যাটোর শক্তিশালী সদস্য হিসাবেই থাকবে; রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করবে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও হামাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরায়েলের অধিকারকে সমর্থন করবে।

তথ্যসূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত