Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পুতুলকে ডব্লিউএইচওতে বসাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার করা হয় : দুদক

putul
[publishpress_authors_box]

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বসাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নেওয়া হয় বলে দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রবিবার দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, তাদের তথ্য-অনুসন্ধানে এ সত্যতা মিলেছে।

এ অবস্থায় ডাব্লিউএইচওর একটি সম্মানজনক পদে সায়দা ওয়াজেদ পুতুলের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানীকর উল্লেখ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলেছে, এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরাল আশংকা রয়েছে।

দুদক বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “যুক্তিযুক্ত কোনও কারণ ছাড়াই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সঙ্গী করা হয়েছে। তাছাড়া, সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে প্রদত্ত তথ্যাদি যথাযথ ছিল না। উক্ত মনোনয়নকালে তিনি কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন মর্মেও তথ্য পাওয়া গেছে।”

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্ব পালনে তাকে বসবাস করতে হচ্ছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানেও মা শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

পুতুলই প্রথম বাংলাদেশি যিনি ডব্লিউএইচওর এই আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী একজন পরিচালক পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সে হিসেবে আরও চার বছরের বেশি সময় তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন।

গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর পুতুলকে এড়িয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। অক্টোবরের ওই চিঠিতে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে মামলা থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুদক বলেছে, ডাব্লিউএইচওর ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিতে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে একই বছরের ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন।”

দুদক বলছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এবং তার পরিবারিক রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ঢাকার ‘পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পের’ ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ১০ কাঠা প্লট করায়ত্ব করেন। সে কারণে তার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় ও অর্থ আত্মসাত করেছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাত করে নিজে লাভবান হয়েছেন মর্মে প্রাপ্ত একটি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে বর্ণিত ফাউন্ডেশনের নামে প্রাপ্য অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন- এমন একটি অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করছে। এর মাধ্যমে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে দুদকের বিজ্ঞপ্তিতে।

পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে দাবি করে দুদক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “এহেন ব্যক্তি বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হয়ে ডাব্লিউএইচওর একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানীকর। এর ফলে বিশ্বমণ্ডলে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরাল আশংকা রয়েছে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৩০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগে তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। কিছু মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কেও। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ছয়টি মামলা করেছে দুদক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত