ধসের পরদিন দেশের পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলছে। সোমবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে সূচক কিছুটা পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
দেশের পুঁজিবাজারে সোমবার সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরু হয়। সূচক ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে থাকা অবস্থায় ডিএসইতে লেনদেন শুরুর পরপরই সূচক প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে এর পর থেকেই তা আবার বাড়তে শুরু করে।
এক পর্যায়ে সকাল পৌনে ১১টার দিকে সূচক ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে ওঠে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬ পয়েন্ট বেশি। এরপর আবার কিছুটা কমে যায় সূচক। সকাল ১১টার পর সূচক আবারও কিছুটা বাড়ে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে সূচক আবারও ৬ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে ওঠে। এরপর সামান্য কমে বেলা ১২টায় সূচক ৬ হাজার ২৫০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল, যা আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি।
দেড় বছর পর গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় এ বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বহাল রাখা হয় অনেকটা বড় মূলধনি ৩৫টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।
বেশিরভাগ শেয়ার থেকে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে রবিবার দেশের পুঁজিবাজারের মূল্যসূচকের বড় পতন হয়, কমে যায় লেনদেনও। রবিবার দিনের লেনদেন শুরুর ২০ মিনিট পর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। পরে অবশ্য তা কিছুটা বাড়ে। দিনশেষে এই সূচক আগের কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে বেলা ১২টা পর্যন্ত লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ৩৮৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বাড়ে ২০৯টির, কমে ১৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
উল্লেখিত সময় পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫০ পয়েন্টে, ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে নামে ১ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে।
এদিকে ডিএসইতে সব সূচক উর্ধ্বমুখী থাকলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। বেলা ১২টা পর্যন্ত সিএসইতে হাতবদল হওয়া ১৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের দর বাড়লেও সবগুলো সূচকই কমেছে। উল্লেখিত সময় পর্যন্ত ৯৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে দাম কমে ৮২টির। আর অপরিবর্তিত থাকে ১৮টির দর।
বেলা ১২টা পর্যন্ত সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের চেয়ে ৯৩ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ২৩৬ পয়েন্টে এবং সিএসইএসক্স সূচক ২৯ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৯১১ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। লেনদেন হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি, এর মধ্যে ৩৫৭টির শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমাতুলে নিয়েছে বিএসইসি। তবে ৩৫টি কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয়েছে।
সর্বনিম্ন দর বেঁধে রাখায় অনেকে এতদিন শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। ফলে ফ্লোর প্রাইস উঠার সুযোগে অনেকেই রবিবার শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। সে কারণে ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর প্রথম দিনের লেনদেনে যে দরপতন হবে, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল।
এসব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশই থাকছে। অর্থাৎ, কোনও শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।