Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

মন্দা পুঁজিবাজার, পাঁচ মাসে সবচেয়ে কম লেনদেন

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

মন্দা পুঁজিবাজারের যেন উঠে দাঁড়ানোর লক্ষণ নেই। এতে আরও হতাশায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার দুই বাজারেই বড় পতন হয়েছে। লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা ৯ দিনের পতনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৫০ পয়েন্টের বেশি বা ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। রবিরার ৬১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে এই সূচক নেমেছে ৫২৫০ পয়েন্টে, যা ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডিএসইএক্স এর চেয়ে নিচে ছিল ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল, এ সূচক সেদিন ছিল ৫১৮৮ পয়েন্টে।   

রবিবার ডিএসইর লেনদেন হয়েছে পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আগের দিনের চেয়ে এদিন ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমে লেনদেন নামে ৩২২ কোটি টাকায়।   

দেশের চলমান সংকটময় অর্থনীতির মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছে, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হবে—গণমাধ্যমের এমন খবরেও বাজারে প্রভাব পড়ছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (১৯ মে) ডিএসইএক্স সূচকটি ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে আসে। দ্বিতীয় দিন সোমবার আরও ৩৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করে। মঙ্গলবার ডিএসইএক্স পড়ে ২২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। সূচকটি নামে ৫ হাজার ৩৭১ দশমিক ১০ পয়েন্টে।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। ওই দিন কোনও বাজারেই লেনদেন হয়নি। শেষ দিন বৃহস্পতিবারও বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবারও ডিএসইএক্স ৬১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ২৫০ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

এ নিয়ে গত নয় কর্মদিবসে ডিএসইএক্স কমেছে ৪৫০ পয়েন্টের বেশি।

পুঁজিবাজারে সূচকের সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘মনস্তাত্ত্বিক সীমা’ হিসেবে পরিচিত। সূচক যখন এ ধরনের সীমার নিচে নেমে যায়, তখন নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে টানা মন্দাভাব চলছে। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ও ডলারের দাম আরেক দফা বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) পরিকল্পনা নিয়েছে।

গত ১৪ মে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে ৪০ লাখ টাকার ওপর মূলধনি আয়ের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ করারোপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ে কোনও কর নেই।

মূলধনি আয়ের ওপর কর আরোপের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।

দরপতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই সীমা আরোপের পর থেকে পুঁজিবাজারে কোনও শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না।

কিন্তু গত কয়েক দিনের দরপতনে দেখা যাচ্ছে, লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটছে। এতে সূচকটি দ্রুত কমতে শুরু করে। দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হলে পরে সেটি খুব বেশি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

পুঁজিবাজার ঘিরে চলা দীর্ঘ উৎকণ্ঠার মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগ হয়। সেদিন অবশ্য সূচকের বড় উত্থান হয়।

ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। সেদিন অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল প্রায় ২০০ পয়েন্ট।

পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল দুই বাজারেই সূচক পড়ে যায়। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৬৯ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে নামে। অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে নেমে আসে।

এরপর কয়েক দিন অবশ্য সূচক অল্প অল্প করে খানিকটা বাড়ে। ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

এরপর আবার সেই পতনের ধারায় ফেরে পুঁজিবাজার। এখনও চলছে সেই পতন।

আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। ৩০ জুন সেই বাজেট পাস হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন বাজেটের বাস্তবায়ন।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতন কেন হচ্ছে—এ প্রশ্নের উত্তরে বাজার বিশ্লেষক ডিএসইর বর্তমান পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দা চলছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও বাজারে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার এবং ডলারের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অন্যদিকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে গণমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর কর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করবে। এই খবর নিয়ে বাজারে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে।”

রবিবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ২৫০ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৩ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৪৬ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। ডিএস-৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। লেনদেনের এই অঙ্ক পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত ৩ জানুয়ারি এই বাজারে ২৯১ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই বাজারে ৫০৮ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।

রবিবার ডিএসইতে মোট ৩৮২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির; কমেছে ৩২২টি দর। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির দর।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭০ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১০ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ২৩২ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে নেমেছে।

লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

২১০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪টির। কমেছে ১৬৫টির। অপরিবর্তিত ছিল ২১টির দর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত