যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করার পর দেশটির পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
একই সঙ্গে এশিয়া এবং ইউরোপের পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে।
এই ধাক্কা মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত বদলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ওয়াল স্ট্রিট, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি এশিয়ার পুঁজিবাজার।
বুধবার ট্রাম্প তার সোশাল মিডিয়া ট্রুথ সোশালে পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুঁজিবাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় বৃহস্পতিবার সকালে এফটিএসই ১০০ সূচক লাফিয়ে বেড়েছে এবং পুরো বাজারজুড়ে শেয়ারের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
এসময় সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে বার্কলেজ, শুরুতে যার শেয়ারের দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। পরে অবশ্য তা ১৪ শতাংশে স্থির হয়।
এছাড়া জেডি স্পোর্টস এবং রোলস রয়েসের শেয়ার যথাক্রমে ১১ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ বাড়ে।
সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যায়।
ডাউ ২৯৬৩ পয়েন্ট অর্থাৎ ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ বৃদ্ধি পায় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়ে।
২০০৮ সালের পর এদিন পুঁজিবাজারে সবচেয়ে ভালো দিন গেছে এস অ্যান্ড পি ৫০০ এর।
অন্যদিকে ২০০১ সালের জানুয়ারির পর সবচেয়ে ভালো দিন দেখেছে নাসডাক। এদিন ছিল তাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৃদ্ধি।
আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে এদিন পুঁজিবাজারে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ডাউ।
টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও শহরের বিনিয়োগ সংস্থা এসডব্লিউবিসির প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ক্রিস ব্রিগ্যাটি বলেন, “পুঁজিবাজারের এই উল্লম্ফন বেশ জোরাল।
“বাজার যে কতটা মরিয়াভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজছিল, তা তার দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।”
পুঁজিবাজারে এই ইতিবাচক পরিবর্তনটি ব্যাপক ছিল বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়।
আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টসেটের তথ্য অনুযায়ী, এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর প্রায় প্রতিটি শেয়ারের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে।
অ্যামাজনের শেয়ারের দাম ১১ দশমিক ৯৮ শতাশ বেড়েছে। নাইকির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, ডেল্টা এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং আমেরিকান এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
নাসডাকে অ্যাপলের শেয়ারের দাম ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, পালানটিরের শেয়ারের দাম ১৯ শতাংশ ও টেসলার শেয়ারের দাম ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর বিনিয়োগকারীরা পুনরায় শেয়ার কেনা শুরু করলেও পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি।
কারণ চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক স্থগিত করেননি ট্রাম্প, বরং শুল্ক হার ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন তিনি।
প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকান পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে চীন, যা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে।
এই দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধে চিন্তিত সংশ্লিষ্ট মহল।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ওপর আরোপিত শুল্কের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সব আমদানি পণ্যের ওপর সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্কও বহাল আছে, যা প্রত্যাহার বা স্থগিত কোনোটাই করেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
তাই বাজারে উল্লম্ফন দেখে ওয়াল স্ট্রিট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হ্যারিস ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা অংশীদার জ্যামি কক্স বলেন, “ট্রাম্প আজ বাজারে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার শুল্ক নীতির কারণে ব্যবসা করা কতটা জটিল।
“কারণ কখন এটি শেষ হবে, তা একমাত্র তিনিই জানেন।”