বিক্রির চাপ বাড়ায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০৩ পয়েন্ট খুইয়েছে টানা ছয় দিনের পতনে। ডিএসইর প্রধান এই সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪০০ পয়েন্টের নিচে।
সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ডিএসইএক্স ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে আসে, ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দ্বিতীয় দিন সোমবার আরও ৩৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে নেমেছে সূচকটি।
সূচকটির এই অবস্থান ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন; ওই দিন ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৪২২ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে সূচকের সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘মনস্তাত্ত্বিক সীমা’ হিসেবে পরিচিত। সূচক যখন এ সীমার নিচে নেমে যায়, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ভর করে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও সেই ভয়-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টানা পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার ১৩২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৬০৫ দশমিক ১৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আগের রবিবার এই সূচক পড়েছিল ২৭০ পয়েন্ট।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) পরিকল্পনা নিয়েছে।
গত সপ্তাহে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে ৪০ লাখ টাকার ওপর মূলধনি আয়ের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ করারোপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ে কোনও ধরনের কর নেই।
মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।
দরপতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই সীমা আরোপের পর থেকে পুঁজিবাজারে কোনও শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না।
কিন্তু গত কয়েক দিনের দরপতনে দেখা যাচ্ছে, লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটছে। এতে সূচকটি দ্রুত কমতে শুরু করে। দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হলে পরে সেটি খুব বেশি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।
পুঁজিবাজার ঘিরে চলা দীর্ঘ উৎকণ্ঠার মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগ হয়। সেদিন অবশ্য সূচকের বড় উত্থান হয়।
ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। সেদিন অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল প্রায় ২০০ পয়েন্ট।
পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল দুই বাজারেই সূচক পড়ে যায়। সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৬৯ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে নামে। অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করে।
এরপর কয়েক দিন অবশ্য সূচক অল্প অল্প করে খানিকটা বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
সোমবারের বাজার পরিস্থিতি
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে নেমে আসে। তার আগের দিন বুধবার এই বাজারে ডিএসইএক্স কমেছিল ৫৮ পয়েন্টের বেশি।
এরপর চলতি সপ্তাহের শুরু দিন রবিবার এই সূচক ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সোমবার কমেছে ৩৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১০ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮০ পয়েন্টে নেমেছে। ডিএস-৩০ সূচক ৯ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বিক্রির চাপে ডিএসইতে লেনদেন খানিকটা বেড়েছে। সোমবার এই বাজারে ৫৬১ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
সোমবার ডিএসইতে মোট ৩৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮১টির। কমেছে ২৭৮টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির দর।
আরেক বাজার সিএসইতে সোমবার লেনদেন কমেছে। এদিন এই বাজারে ৭ কোটি ১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। রবিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া ২২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ১৬৬টির ও অপরিবর্তিত ২১টির দর।