বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিআরসি) মিলনায়তনে কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এই পরামর্শ তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “টাকা পাচার থেকে আমাদের ডলার ক্রাইসিস শুরু হয়েছে। দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে আমাদের ডলার ক্রাইসিস থাকবে না।”
এসময় তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “টাকা পাচার বন্ধ করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তাহলে রিজার্ভের অস্থিতিশীলতা আর থাকবে না।”
আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য, হুন্ডি ও চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরাও বলে আসছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. আলম এসময় রিজার্ভ শক্তিশালী করার জন্য অফশোর ব্যাংকিং শুরু করার পরামর্শও দেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের রিজার্ভ অনেকটাই স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনছে। পাকিস্তান রিজার্ভ নিয়ে যখন খারাপ অবস্থায় পড়েছিল তখন দেশটি অফশোর ব্যাংকিংয়ের কৌশল নিয়ে সুফল পেয়েছে। এই কৌশল আমাদেরও গ্রহণ করা উচিত।”
“এই কৌশল নিলে আমাদের ডলারের মজুদ বাড়বে বলে আমার মনে হয়”, বলেন তিনি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের মাথা ব্যথার প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের ২২ শতাংশ আবার অবলোপন করা হয়েছে।”
প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিক বাজেটের বাইরে এসে সময়োপযোগী এবং সাহসী বাজেট বলে মনে করেন ড. আলম।
তিনি বলেন, “বিগত বেশ কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অতীতের বাজেটে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি অর্থায়নের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।”
বাস্তবতা মেনে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের বাজেট হওয়ার কথা ছিল ৯ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার।
“কিন্তু কোভিড-১৯ এর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যা বাস্তবতা মেনে নিয়ে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা কমিয়ে বাজেট করা হয়েছে। তাই এই বাজেট বাস্তবতা মেনে সাহসী বাজেট।”
গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে এডিপির বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, “আসলে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে উচ্চমূল্যে জ্বালানি তেল এবং সার আমদানির কারণে গত দুই বছরে আমাদের প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে।
“এই অতিরিক্ত দামে আমদানি করে হলেও আমাদের জ্বালানি এবং কৃষকের কাছে সারসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে পেরেছি বলে বাম্পার ফলন এবং খাদ্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছি। তবে খারাপ সময় অতিক্রম করে এখন আমাদের রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রপ্তানি গত বছরের তুলনায় এক বিলিয়ন ডলার এবং রেমিটেন্স ২ বিলিয়ন বেশি আসছে।”
তিনি বলেন, “নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার ১ কোটি মানুষকে কম মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করছে। কম দামে খাদ্যপণ্য সরবরাহের সরকারি এই কার্যক্রম সারাদেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, “আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবের পর অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন ‘সরকার ব্যর্থ হবে, দেশ দেওলিয়া হবে’। এই সরকারকে বিশ্বব্যাংক আর ঋণ দিবে না।
“কিন্তু আমরা ব্যর্থ হলাম কই, সরকারও ব্যর্থ, পড়ে যাইনি, দেউলিয়াও হয়নি এবং বিশ্বব্যাংকও ঋণ দিচ্ছে, দেখেন আপনারা।”
সমালোচকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাজেট দেখেন এবং বুঝার চেষ্টার করেন।”