শব্দদূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বাসস জানিয়েছে, রাজধানীর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ অডিটোরিয়ামে শনিবার তৃতীয় ন্যাশনাল ন্যাচার ফেস্টিভ্যাল ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, “শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। বাংলাদেশ শব্দ দূষণে পৃথিবীতে এক নম্বর অবস্থানে আছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি, কিন্তু এরকম একটি প্র্যাকটিস চালু রাখা যাবে না। অন্তত শহরগুলোতে শব্দদূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “শব্দ দূষণের প্রথম উৎস হচ্ছে হর্ন। এটি আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা নিজেদের গাড়ি থেকেই যদি হর্ন না বাজানোর অভ্যাস করতে পারি তাহলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।”
ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার ১০টি রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা হবে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “তারপর আমরা আইন প্রয়োগের কাজ শুরু করব। আমরা এর মধ্যেই বিমানবন্দর এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছি এবং সেখানকার কিছু অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে।”
জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, “গত ৫০ বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। আবার দক্ষিণ অঞ্চলে এরকম বন্যাও মানুষ আগে কখনও দেখেনি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি বড় কারণ হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো।”
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের কাছে (বাংলাদেশে) নবায়নযোগ্য জ্বালানি রয়েছে, যা আমরা অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক কম টাকায় পেতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি ভবনের উপরই যে সোলার প্যানেল রয়েছে সেটি কাজ করে না। যদি ওই সোলার প্যানেলগুলো কাজ করত তাহলে ২০ মিনিট কিংবা কয়েক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে কাউকে চিন্তিত হতে হতো না। আর সরকারকেও উচ্চ মূল্যে জ্বালানি কিনে এনে সরবরাহ করতে হতো না।”
সৌর এবং বায়ু বিদ্যুতে বাংলাদেশে বড় সম্ভাবনা রয়েছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে উন্নত বিশ্বের ভোগবাদী জীবনযাপনের জন্য, যা ফরাসি বিপ্লবের পরে শুরু হয়েছে। এর কারণেই গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ অনেক প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য আমাদের জীবনযাত্রার বর্তমান ধরন পরিবর্তন করতে হবে।
“আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা যদি আমরা উন্নত করতে পারতাম তাহলে ঢাকার ওপর এতো চাপ পড়ত না। প্রকৃতির প্রতি ন্যায়বিচার করতে হলেই আমাদের লাইফস্টাইল বা জীবনধারা পাল্টাতে হবে।”
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাচার ক্লাবের চিফ কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ নুরুন্নবীসহ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।