বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে একটি অস্বাভাবিক শক্তিশালী সৌর ঝড় পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে।
বলা হচ্ছে, এটি গত দুই দশকের মধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড়। ২০০৩ সালের পর জি-৫ মাত্রার প্রথম সৌরঝড় এটি। এর প্রভাব এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার কয়েকটি সৌর বিস্ফোরণের ধাক্কা প্রত্যাশিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই পৃথিবীতে পৌঁছে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ বা নোয়া) এর ফলে একটি বিরল তীব্র ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে।
সূর্য যখন প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তি নির্গত করে বা উগরে দেয় তখন এই রকম ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
নোয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কক্ষপথে থাকা মহাকাশযান বা স্যাটেলাইটগুলোর অপারেটরদেরকে সতর্ক থাকতে বলেছে। পাশাপাশি ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকেও সতর্ক করেছে।
তবে নোয়ার স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের বিজ্ঞানী রব স্টিনবার্গ বলেন, “পৃথিবীর মানুষদের ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না, ফলে তাদের কিছু করতে হবে না।”
সৌরঝড় কী
সূর্য থেকে নির্গত তীব্র বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তির বিকিরণকে সৌর ঝড় বলা হয়। সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে চুম্বকীয় প্লাজমার বড় অগ্ন্যুৎপাত বা বিস্ফোরণের ফলে এটি ঘটে।
এর ফলে সূর্যপৃষ্ঠ থেকে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় বিকিরণ ছিটকে বেরোতে থাকে। তার সঙ্গে নির্গত হয় তীব্র শক্তি, যা গোটা সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে।
একে করোনাল মাস ইজেকশনও বলে। সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডলকে বলা হয় করোন।
এই বিকিরণ পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সংস্পর্শে এলে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটে অরোরা বা মেরুজ্যোতির আকার ধারণ করে।
শুক্রবারের সৌরঝড়ের কারণে উত্তর ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতে অরোরা বা মেরুজ্যোতি দেখা গেছে। সৌরঝড়টি যুক্তরাষ্ট্রের আকাশেও নর্দান লাইট বা উত্তরের আলো তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অসাধারণ দৃশ্যের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।
সৌরঝড়ের প্রভাব
সৌর ঝড় পাওয়ার গ্রিডের উচ্চ-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে, তবে সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইনে এর কোনও প্রভাব পড়ে না। এতে স্যাটেলাইটগুলোও প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে পৃথিবীতে ন্যাভিগেশন এবং যোগাযোগ পরিষেবাগুলো ব্যাহত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে এমনই একটি তীব্র ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের ফলে সুইডেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এমনকি ঝড় শেষ হয়ে গেলেও, জিপিএস স্যাটেলাইট এবং গ্রাউন্ড রিসিভারের মধ্যে সংকেতগুলো স্ক্র্যাম্বল বা হারিয়ে যেতে পারে। তবে রব স্টিনবার্গ বলেন, এতো বেশি সংখ্যক নেভিগেশন স্যাটেলাইট আছে যে কোনও বিভ্রাট দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
নাসা জানিয়েছে, ঝড়টি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা সাত নভোচারীর জন্য কোনও গুরুতর হুমকি তৈরি করবে না। স্টিনবার্গের মতে, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধি। তবে ক্রুরা প্রয়োজনে স্টেশনের আরও সুরক্ষিত অংশে যেতে পারবে।
বর্ধিত বিকিরণ নাসার কিছু গবেষণা স্যাটেলাইটকেও হুমকিতে ফেলতে পারে। সংস্থাটির হেলিওফিজিক্স বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক আন্টি পুলকিনেন বলেছেন, ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনে অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্রগুলো বন্ধ করা হবে।
গত বুধবার থেকেই সূর্য শক্তিশালী সৌর শিখা তৈরি করছিল, যার ফলে অন্তত সাতটি প্লাজমা বিস্ফোরণ ঘটে। প্রতিটি বিস্ফোরণে সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল বা করোনা থেকে কোটি কোটি টন প্লাজমা ও বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তি ধারণ করতে পারে।
তথ্যসূত্র: এপি ও সিএনএন