ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের কাঠামো এখনও পরিবর্তন করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের।
শনিবার বিকালে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুল (ম্যাটস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, “যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিদায় হলেও, আজও শহীদদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি।”
ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে বিলুপ্ত করাই ছিল আন্দোলনের লক্ষ্য– একথা জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজপথে তারুণ্য যে লড়াই করেছে, সে লড়াইয়ের উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদের কাঠামোকে বিলুপ্ত করা, শুধু ব্যক্তি হাসিনার উৎখাত নয়।
“কিন্তু এক যুগ ধরে চলা ফ্যাসিবাদের যে কাঠামো তা এখনও পরিবর্তন করা যায়নি। প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বসিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা এখনও আছে।”
পরাজিত শক্তি এখনও সক্রিয় মন্তব্য করে কাদের বলেন, “দেশ থেকে অন্যায়, অবিচার, অনিয়মকে দূর করার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, নিজেদের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক স্বার্থে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে শত শহীদের কাছে জবাব দেওয়ার কিছুই থাকবে না।”
মতবিনমিয় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলের এই সমন্বয়ক বলেন, “৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে যে অরাজকতা সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, সেটা আপনারা রুখে দিয়েছেন। আপনারা মন্দির, মসজিদ, গির্জা পাহারা দিয়েছেন। কোন অপশক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, সেটা আপনারা রুখে দিয়েছেন। আপনারা দেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন।
“আমি একটা মিনতি করতে চাই, আমাদের ওপর মানুষের যে আস্থা, যে বিশ্বাস ও ভরসার জায়গায় মানুষ আমাদের রেখেছিল, মাথার তাজ করে রেখেছিল, আমরা যেন তা ধরে রাখতে পারি।”
মানুষের আস্থা ও ভরসা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে দেশে বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা ঢেলে সাজাতে চাই। আগামীর বাংলাদেশে তারুণ্যে যে স্বপ্ন, শহীদদের যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।”
কেমন বাংলাদেশ চান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে বিচার বিভাগ যেন নির্বাহী বিভাগের করায়ত্বে না যায়। আমরা চাই পুলিশ বাহিনী আমাদের দেশের মানুষের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে। সেবক আমাদের প্রভু হবে না, আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চাই।”