আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার একটি দল। তারা মোবাইল-মানিব্যাগ তল্লাশি করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা পেলেই মারধর করছে।
১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান নেয় তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে আগত লোকজনের মোবাইল-মানিব্যাগ তল্লাশি করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় অন্তত ২০ জনকে মারধর ও আটক করেছে ছাত্র-জনতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে আওয়ামী লীগ। দলটি ক্ষমতায় থাকায় গত ১৫ বছর দেশে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। দিনটিতে সরকারি ছুটিও ছিল এতদিন।
তবে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিল করে দেয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই আছেন অন্তরালে।
এমন পরিস্থিতিতে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও ভারতে অবস্থানরত দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের শোক দিবস পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ১২ আগস্ট বিবিসি বাংলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অজ্ঞাত স্থানে থেকে হানিফ বলেন, “ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দলের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলে আমি জেনেছি।”
তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগ কোনও পক্ষ থেকেই কিছু জানা যায়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্বালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে ধানমণ্ডিতে গিয়ে মোড়ে মোড়ে ছাত্র-জনতাকে লাঠি ও পাইপে জাতীয় পতাকা বেঁধে ৩২ নম্বরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ধানমণ্ডি লেক দিয়ে প্রবেশপথ উন্মুক্ত রেখে বাকি পথ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
সেখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মাইকিং করে নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। মাইকে আগত লোকজনের মোবাইল-মানিব্যাগ তল্লাশি করতে বলা হচ্ছে। মোবাইল-মানিব্যাগ তল্লাশি করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ পেলেই তাকে মারধর করছে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। মারধরের বিষয়ে মাইকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হচ্ছে– “পুরো শরীরে মারেন, মাথায় মাইরেন না।”
এছাড়া কালো পোশাক পরিহিত কাউকে দেখলে মেজাজ হারাচ্ছেন সেখানে অবস্থানকারীরা। কালো শাড়ি পরিহিত এক নারীকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
সকাল ৮টার দিকে ছাত্র-জনতাকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে আসাদগেটগামী বাসগুলো থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়। পাশাপাশি আসাদগেট থেকে কলাবাগানগামী বাস থামিয়েও তল্লাশি করা হয়।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নীল পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যক্তির মানিব্যাগ তল্লাশি করে আওয়ামী লীগের এক নেতার ভিজিটিং কার্ড পাওয়ার পর তাকে মারধর করে ছাত্র-জনতা।
সেখানে মাইকিং করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটির সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। তার নাম আব্দুর রাজ্জাক, তিনি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “কালকে (বুধবার) সন্ধ্যার পর থেকে আমরা অবস্থান নিয়েছি। ছাত্র-জনতা মিলে সশস্ত্রভাবে কালকে থেকেই আমরা সারাদিন ছিলাম। দুই থেকে তিন হাজার মানুষ মিলে আমরা ধানমণ্ডি ৩২ কে ঘেরাও করে রেখেছি। পশ্চিম-পূর্ব পাশে আমাদের কিছু ভাই রয়েছে।”
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা চাই ধানমণ্ডি ৩২ কোনও অপরাজনীতির কেন্দ্রস্থল না হোক, শয়তানের আড্ডাখানা না হোক। যে স্বৈরাচারী বিদেশে বসে ম্যাসেজ দিচ্ছে, দালালদের যারা আবার অপরাজনীতি করতে চায়, আমরা চাই না তারা আবার প্রতিবিপ্লবের সূচনা করুক।”
প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর জন্য ছাত্র-জনতা মাঠে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০ থেকে ৩০ জনকে আটক করছি। তারা ব্যাগের মধ্যে ফুল নিয়ে আসছে। এদেরকে আটক করে আমরা পুলিশে দিচ্ছি।”