ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও হুঁশিয়ার করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দৃশ্যত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের এক বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সাখাওয়াত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুপুরে বলেছিলেন, “এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জীবন বিপন্ন হয়। আমি বরং মনে করি, আপনারা আপনাদের পার্টি রি–অর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করুন।”
তার ওই বক্তব্যকে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিসূচক বলে সোশাল মিডিয়ায় আন্দোলনকারী অনেকে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে।
তার মধ্যে বিকালের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা উপদেষ্টাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনারা উপদেষ্টা হয়েছেন, আপনারা বক্তব্য দেওয়ার আগে ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্র মনে রাখবেন।
“খুনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই, আমরা যেভাবে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছি, ঠিক একইভাবে স্বৈরাচার পুনর্বাসনের চেষ্টাকারীদেরও নামাতে সময় লাগবে না।”
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “আমরা আজ কিছু বিষয়ে আপনাদের সতর্ক করতে এসেছি। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার তাড়ানোর পরদিন থেকে কিছু কুচক্রী মহল ক্যু করার চেষ্টা করছিল। আমরা ছাত্র-জনতা তা দমন করি, এরপর সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় ক্যু করার চেষ্টা করলে আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছি।
“আমাদের বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে এখনও একটি মহল ক্যু করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা ছাত্র-জনতা তাদের পরিকল্পনা সফল হতে দেবো না।”
আন্দোলনে সহিংসতায় কয়েকশ মানুষের মৃত্যুর জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারপর রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা ছিলেন।
হাসনাত শিক্ষার্থী-জনতার হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানান। সে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন তারা।
এই অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে মন্তব্য করে হাসনাত বলেন, “কিন্তু কিছু গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসন করতে চায়। ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই তা হতে দেবে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। তাদের স্লোগান ছিল- ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই- খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘অপরাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা হাসনাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তুলে বলেন, “ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল। সেই দখলদারত্বের রাজনীতি পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।”