বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনে সোমবার রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ইসিবি চত্বর, সায়েন্সল্যাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এলাকায় শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে।
রবিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসিবি চত্বরে জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেঠা করে ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়।
সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন বিক্ষোভকারী গলি থেকে ইটপাটকেল ছুড়ছিল। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে ও কয়েকজনকে আটক করেছে।
এদিকে, পল্টন মোড়ে বিক্ষোভকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সহ-সমন্বয়কারীসহ চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক চারজনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহ-সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক ছাড়াও রাফি নামে একজন রয়েছেন। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
আটক করে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ওঠানোর সময় মোসাদ্দেক চিৎকার করে বলেন, “শহীদের রক্তের বদলা না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এর আগে পল্টন মোড়ে আট থেকে দশজন আন্দোলনকারীকে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার ও আটকৃতদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা যায়। এ সময় পল্টন মোড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এক পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের ডাকেন। পরে মোসাদ্দেক ও রাফি কথা বলতে এগিয়ে গেলে তাদের আটক করা হয়। অন্য দুইজনকে সড়ক থেকে ধরে আনা হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে সাইন্সল্যাব এলাকায় জড়ো হতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সেখান থেকে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করতেও দেখা যায়।
অন্যদিকে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সামনে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী অবস্থান নেয়। সেখানে ছাত্র হত্যার বিচার দাবিতে নানান প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। সেখানেও পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের এক ভিডিও রবিবার রাতে আসে সংবাদমাধ্যমে, যেখানে চলমান আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা রয়েছে।
তবে বাইরে থাকা সমন্বয়করা এই ভিডিও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
ছয় সমন্বয়কের ভিডিওটি সংবাদমাধ্যমে আসার পর রবিবার ১২টার দিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পাশাপাশি আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোমবার ঢাকার আটটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে বলে জানানো হয়েছিল। এই আট স্থান হচ্ছে– সায়েন্সল্যাব, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আট নম্বর গেট, প্রেসক্লাব, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর ১০, মিরপুরের ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালী।
সকাল থেকেই এসব এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির পাশাপাশি র্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে।