Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

অসহযোগের প্রথম দিনেই ব্যাপক সংঘাত

বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ভেতরে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে কমপক্ষে ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির শুরুর দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজপথে নামার পর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকায় সংঘাতের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ব্যাপক ভাংচুর এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণে থাকা বেশ কিছু গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বগুড়া ও রংপুরে নিহত হয়েছে দুজন করে চারজন। মাগুরায় নিহত হয়েছে একজন।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে বিভিন্ন জেলায়।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির জন্য সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলে রবিবার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।

একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রবিবার রাজপথে আওয়ামী লীগ নেতাদের জমায়েত এবং সোমবার শোক মিছিলের কর্মসূচি দেন।

সংঘাতের এই চিত্র উত্তরার।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে আওয়ামী লীগ চায় না বলে তিনি দাবি করলেও রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের জমায়াতে অনেককে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়। আবার আন্দোলনকারীরাও লাঠিসোঁটা নিয়েই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।

সকাল থেকে ঢাকা শান্ত হলেও প্রথম উত্তেজনা ছড়ায় শাহবাগে। আন্দোলনকারীদের একটি দল সড়কে জড়ো হয়েছিল। বিএসএমএমইউর সামনে জড়ো হয়েছিল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

সকাল ১১টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পূবালী ব্যাংকের পাশের ফটক দিয়ে বিএসএমএমইউর ভেতরে ঢুকে গেলে আন্দোলনকারীরাও তাদের ধাওয়া দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলার মধ্যে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাংচুর হয় ভবন।

এই সময় কাঁটাবনের দিক থেকে বড় একটি মিছিল শাহবাগে এসে জড়ো হয়। শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়ে থাকলেও সংঘর্ষের সময় তাদের এগোতে দেখা যায়নি। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ থানা ঘিরে ফেললে পুলিশ সদস্যরা থানা প্রাঙ্গণের ভেতরে ঢুকে পড়ে।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার সিএমএম কোর্টের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল আন্দোলনকারীরা। তার আগে সকালে সেখানে একটি পুলিশের গাড়ি পোড়ানো হয়।

পল্টন মোড়েও অবস্থান নিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। কাছে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দলের নেতা-কর্মীরাও জড়ো হয়েছিল। দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

আন্দোলনকারীদের একটি দল প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ বক্স ভাংচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। বিভিন্ন গলিতে তারা অবস্থান নিয়েছে।

বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কয়েকটি সাঁজোয়া যানকে বঙ্গভবনের দিকে এগোতে দেখা যায়।

কয়েক হাজার আন্দোলনকারী দুপুরে মৎস্যভবন এলাকায় অবস্থান নেয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তাদের কার্যালয়ের দিকে সরে গেছে।

পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাউকে কাউকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা গেছে। মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে মিছিলকারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে ধারাল অস্ত্র দেখা গেছে।

একদিন আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, “কেউ যদি মারে, তাহলে তো কেউ বসে থাকবে না। আবার পুলিশ আঘাত পেলে তো সেলফ ডিফেন্স করবেই।”

বাড্ডা-রামপুরার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকের হাতে রয়েছে লাঠি।

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “কাল ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আজ আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে, এজন্য নিজেদের রক্ষায় এসব নিয়ে বের হতে হয়েছে।

“এতদিন তো আমাদের হাতে কিছু ছিল না, আমরা পুরোটা সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। কিন্তু কাল যখন ঘোষণা দিল, তখন তো আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হয়।”

মিরপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলছে দুপুর থেকে। সেখানে কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণও ঘটেছে।

মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রবিবার দুপুর ২টা।

মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে আছে। ১০ নম্বর গোল চত্বরে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

উত্তরায়ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধেছে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল। পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরাও সেদিকে এগোয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সেখানে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহতের খবর মিলেছে। তারমধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ।

পরে আন্দোলনকারীরা স্থান পরিবর্তন করে টাইগারপাশ মোড়ে চলে যায়। ছাত্রলী-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা নিউ মার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত