Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

বুয়েটে ছাত্রলীগ সক্রিয় হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে: ছাত্রদল

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ছবি: সকাল সন্ধ্যা
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালু করার পদক্ষেপকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

তিনি বলেন, বুয়েটের কোনও শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে নির্যাতনের শিকার হলে তার দায় ছাত্রলীগকেই নিতে হবে।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বুয়েট সঙ্কট: সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির দাবি’তে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। সেখানেই রাকিবুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে প্রতি সংহতি জানায় ছাত্রদল। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রলীগ দেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে। ছাত্রদলসহ কোনও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন তাদের দুষ্কর্ম্মের দায়ভার বহন করবে না। 

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “বুয়েটের শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত এই কারণে যে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তাদেরকে পড়াশোনা এবং ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিং, গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরাগভাজন হলে হল থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে।”

বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “ছাত্রলীগের নির্যাতনে আবরার ফাহাদের মতো মর্মান্তিক পরিণতি যেকোনো মুহূর্তে যে কারও জীবনে নেমে আসতে পারে, এ নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। তাদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা এবং অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কাকে আমরা যৌক্তিক মনে করছি। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।” 

বুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাত্রদল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রলীগের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

“২০১৯ সালে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পরিকল্পিতভাবে খুন করার পর হাতেগোনা কয়েকজন বাদে বুয়েটের সব শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। রাষ্ট্রে নিরাপত্তার অভাবে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলে।”

২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সদস্যরা বুয়েটে প্রবেশ করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আপাতদৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান, তার একক দায় ছাত্রলীগকে নিতে হবে; লিখিত বক্তব্যে এ কথাও উল্লেখ করা হয়।

সেখানে অভিযোগ করে বলা হয়, “মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সব সীমা অতিক্রম করেছে।”

২০১৯ সালে বুয়েটের হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর পিটুনিতে নিহত হন শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ওই খুনের দায়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে, যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে ৫ জনের।

দুই যুগ আগে ২০০২ সালের ৮ জুন ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি। তার মৃত্যুর দিনটি বুয়েটে সন্ত্রাসবিরোধী দিবস হিসাবে পালিত হয়। সনির নামে বুয়েটে একটি হলও করা হয়।

সনির হত্যার মতো আবরারের মৃত্যুর পরও বুয়েট শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তাদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন। তবে নিষেধাজ্ঞার সেই আদেশ সম্প্রতি হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর থেকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা স্বস্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে আছে জানিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “বুয়েটসহ সারাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ টর্চার সেল গড়ে তোলে। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েটের টর্চার সেলগুলো বন্ধ হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গত ১৫ বছরের চিত্র তুলে ধরেন ছাত্রদল সভাপতি। ছাত্রলীগ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগও আনেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুয়েটে কোনও ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা দেখতে চায় না।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হলে সেখানে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্যাম্পাস ও হলে তাদের অবাধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন রাকিবুল ইসলাম। সব শিক্ষার্থীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এসব কিছু নিশ্চিত না করে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে রাতের আঁধারে মিটিং করে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদল সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর প্রধান, প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ অন্যরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত