১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচনের মতো ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে সৃষ্ট সহিংসতায় আহতদের দেখতে মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপির এই নেতা।
সেখানেই তিনি বলেন, “১৫ আগস্ট সামনে। এদিনকে সামনে রেখে জাতীয় নির্বাচনের মতোই ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের বিশ্বাস, জাগ্রত ছাত্র-জনতা সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালে তার মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১৫ বছর দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। পতন হয় তার সরকারের। দেশজুড়ে চলা নানা অরাজকতার মধ্যেই নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৭ উপদেষ্টা তাদের নিয়মিত কাজ শুরু করেছেন।
এরই মধ্যে গত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে বদল এসেছে বিচার বিভাগেও।
এ অবস্থায় চলতি বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করা হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। দিনটিকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে আশঙ্কা জানাচ্ছেন বিএনপির নেতারা।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও তার ফেইসবুক পোস্টে ১৫ আগস্ট ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
আন্দোলনে আহতদের দেখতে গিয়ে মঈন খান বলেন, “ছাত্র-জনতার পছন্দে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। ফলে তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। ছাত্ররা প্রমাণ করেছে কোনও স্বৈরাচার সরকার নির্যাতন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তাদের এ সাফল্য বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, আন্দোলনের সময় গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ৭৬৯ জন ভর্তি হন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ১৯০ জন।
এখনও ঢাকার বাইরে থেকে আহত রোগী আসছেন বলেও জানান তিনি।
বিএনপির ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর শুক্রবার সাম্প্রতিক আন্দোলনে আহত শহীদদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
যুবদলের বিক্ষোভ কর্মসূচি
শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী দুদিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার যুবদলের সব জেলা, মহানগর, থানা-উপজেলা ও পৌর ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার যুবদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লড়াই করা ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি ও সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সরাসরি নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচারের দাবি চাওয়া হয়েছে।
“বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে এসব কাজের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।”
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন দলের নেতাকর্মীদের ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।