Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

মেট্রোরেল : স্বস্তির বাহন না থাকায় যত অস্বস্তি

ঢাকায় রাতের মেট্রোরেল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকায় রাতের মেট্রোরেল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of কমল জোহা খান

কমল জোহা খান

প্রায় দুই কোটি ঢাকাবাসীর ‘স্বপ্নের বাহন’ মেট্রোরেল। ২০১২ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বপ্ন বুননের কাজ।

এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোরেল প্রকল্পের পাইলিংয়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। সবমিলে প্রায় এক যুগ কেটে যায় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে।

ঢাকার বুকে মেট্রোরেলকে মূর্ত করার নেপথ্যের কাহিনী সুখকর ছিল না। প্রকল্প এলাকায় দিনরাত যানজট ছিল এর প্রধান কারণ। ব্যস্ত জীবনে এই যানজট কেড়ে নিয়েছিল নাগরিকদের মূল্যবান সময়।

সেই দুঃসহ স্মৃতি ঠেলে বছরখানেক হলো মতিঝিল থেকে উত্তরা রুটে পুরোদমে মেট্রোরেলের পথচলা। মাত্র আধ ঘণ্টায় উত্তরা থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় রাজধানীর আরেক প্রান্তের মতিঝিল এলাকায়। অল্প দিনেই কয়েক লাখ মানুষের স্বস্তির বাহন হয়ে ওঠে মেট্রোরেল।

মেট্রোরেল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের চলাচলের মাধ্যম মেট্রোরেল। এতে ঢাকার রাজপথে যানজট কিছুটা কমে যায়।

পথচলা শুরুর পর গত ১৮ জুলাই প্রথম প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে মেট্রোরেল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে ওইদিন দুপুরে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিন।

নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সেদিন বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।

পরদিন ১৯ জুলাই মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মেট্রোরেলের ফিরে আসা।

আর তখন থেকেই আবারও সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে আসে ঢাকার কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে। এদেরই একজন মিরপুর-১০ নম্বরের বাসিন্দা খন্দকার আকিফ আহসান।

উত্তরার আজমপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তিনি। মেট্রোরেলে চড়ে মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছে যেতেন উত্তরায়। সেখানে এখন তার ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় ঘণ্টা।

আকিফ আহসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মিরপুর-১০ নম্বর থেকে এমআরটি পাসে উত্তরা উত্তর স্টেশন পর্যন্ত যেতে ৩৬ টাকা ভাড়া কাটা হতো। সেখান থেকে রিকশায় আজমপুরে ৫০-৬০ টাকা ভাড়া। ৯০ টাকা খরচ হলেও সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে রওনা হয়ে ৯টায় অফিসে চলে যেতে পারতাম।

“এখন আধ ঘণ্টা আগে রওনা হয়েও বাসে করে অফিসে যেতে বেজে যায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১০টা। সরকার পরিবর্তনের পর বাস কম থাকায় দীর্ঘসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।”

উত্তরার বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের অফিস ঢাকার মতিঝিলে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর থেকে বাসা পরিবর্তন করে দিয়াবাড়িতে ওঠেন তিনি।

বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে মাত্র আধ ঘণ্টায় অফিস চলে যেতেন তিনি। কাজ শেষে ছুটির পর ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরতেন মেট্রোরেলে চেপে।

কিন্তু এখন ঘরে ফেরার সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাকে। আনোয়ার হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নিজের গাড়িতে চলাচল করি। উত্তরা থেকে সকাল ৭টায় বের হই। আজমপুর এসে সিগন্যালে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ফার্মগেট আসতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। এরপর অফিসে আসতে আরও এক ঘণ্টা।”

তিনি বলেন, “অফিস ছুটির পর বাড়ি ফিরতে রাত ৮টা বেজে যায়। আসা-যাওয়া মিলে ৭ ঘণ্টার মতো রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে।”

আকিফ আহসান বা আনোয়ার হোসেনের মতো যাত্রীরা আশা করছেন, যত দ্রুত সম্ভব মেট্রোরেল যাতে চালু করা হয়।

ভাঙচুরের পর কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন।

ঢাকাবাসীদের বিড়ম্বনার কথা বিবেচনায় নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর নির্দেশ দেন। তার নির্দেশের পর শনিবার থেকে মেট্রোরেল চলাচলের প্রস্তুতিও নেয় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছিল, শনিবার চালু হবে মেট্রোরেল, তবে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে থামবে না এই ট্রেন।

ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছিলেন, তাদের (ডিএমটিসিএল) বিভিন্ন বিভাগকে শনিবার মেট্রোরেল চালুর আগে কোনও প্রতিবন্ধকতা আছে কি না, তা যাচাই-পরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বেশিরভাগ বিভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

মেট্রোরেল পুনরায় চালুর আগে ১৩ আগস্ট ব্লাঙ্ক অপারেশন (যাত্রীবিহীন ট্রেন চলাচল) শুরুর কথা থাকলেও সেটি এখনও শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে মেট্রোরেলের এক চালক সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, সবগুলো ট্রেনকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নয়তো শুক্রবার ব্লাঙ্ক অপারেশন করা হবে। এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে চালকরা।

তবে এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমটিসিএল জানায়, শনিবার থেকে মেট্রোরেল চালু হচ্ছে না। এ ছাড়া কবে নাগাদ মেট্রোরেল পুনরায় চালু হবে সেই বিষয়েও বিজ্ঞপ্তিতে কিছু জানায়নি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার গত ১১ আগস্ট ডিএমটিসিএলের আওতাধীন মেট্রোরেল চলাচলে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাত দিনের মধ্যে পুনরায় চালুর জন্য নির্দেশনা দেয়। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত মেট্রোরেল পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত