দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে পুরো রমজান মাসে ঢাকার একটি এলাকায় সুলভ দামে নিত্যপণ্য বিক্রিতে বাজার বসিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। গত শনিবার থেকে আদাবর থানায় এই বিক্রি চলছে।
নিজের সংসদীয় এলাকার ভোটারদের জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। উদ্যোক্তারা জানান, পুরো সংসদীয় আসনের ৮টি নির্দিষ্ট এলাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত এ বাজারে চলবে কেনাবেচা।
সকাল থেকে এই বাজারে শুরু হয়ে যায় ক্রেতাদের ভিড়। দুপুর হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় অনেক কিছু। ছাত্র ও যুবলীগ নেতারা দাবি করছেন, ঢাকার বাইরের কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে এনে এখানে কম দামে বিক্রি করছেন তারা।
তবে ক্রেতারা বলছেন, অন্য বাজারের সঙ্গে এ বাজারের দামে তেমন তফাত নেই।
ক্রেতাদের নানা মত
অন্য বাজারের তুলনায় এখানে সব জিনিসেই চার থেকে পাঁচ টাকা দাম কম রয়েছে বলে জানান ক্রেতা মোবারক খান। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বাজার তো শেষ। অল্প কিছু ডাল আছে। কাঁচা সবজি, মাংস শেষ। গরু কখন জবাই দেয়, কখন বিক্রি করে, সেগুলা তো বলতে পারলাম না।”
তবে প্রথম দিনের তুলনায় এ বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করেন আদাবরের বাসিন্দা আফরোজা পারভীন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আলু নিছিলাম ২৮ টাকা, আজ ৩০ টাকা। হয়তো কাচাঁমাল বলে দাম একটু আপ-ডাউন করে। চিনি এবং ছোলা নিলাম। এগুলোর দাম বাড়ল কি না বুঝতে পারিনি।”
তবে ঢাকার অন্যান্য কাঁচা বাজারের তুলনায় এখানে দাম কম বলে মনে করেন এই গৃহিনী। এ ব্যাপারে অবশ্য ভিন্নমত চাকরিজীবী শফিকুল ইসলামের। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “দামে তেমন কোনও তফাত নাই, একই রকম। রুই মাছ কিনছি ২৮০ টাকা দিয়ে। বাজারে শুনলাম ২৬০ টাকা।’’
স্ত্রীর পরামর্শে সুলভ মূল্যের বাজারে এসেছেন জানিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলেন, ‘‘কই সস্তা?”
পণ্য আসে কৃষকের কাছ থেকে
৯ মার্চ থেকে সুলভ মূল্যের বাজার শুরু হয়েছে জানিয়ে আদাবর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শুধু নিম্নশ্রেণী পেশার মানুষ নয়, এখানে আসছেন অনেক শ্রেণী পেশার মানুষ।”
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নানকের উদ্যোগে রমজানে মাসে জনগণকে স্বস্তি দিতেই এই স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকেন বলে জানান আলমগীর; বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরের কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে এসব পণ্য। যে দামে কেনা হয়, সেই দামেই বিক্রি করা হয়।”
দুপুরের মধ্যে অনেক পণ্য শেষ হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “সকাল সকাল শুরু হয়েছে তো। তাই শেষ হয়ে যায়। গরুর দাম অনেক। গরু আনতে রাতে যাবে হয়তো। অথবা শুক্রবার থেকে পাওয়া যাবে।”
শ্যামলীর পিসি কালচার হাউজিং এলাকার ১২ নাম্বার গেটে সুলভ মূল্যের বাজারের আরেকটি বিক্রয় কেন্দ্রে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মোহাম্মাদ হান্নান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি, তবে দলের সাংগঠনিক উদ্যোগে তিনি হয়েছেন মাছ বিক্রেতা। বাজারের বেচাকেনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বেচা-বিক্রি মোটামুটি। রুই মাছ ৩৫০ টাকা, পাবদা ৩৮০ টাকা।’’ রমজান উপলক্ষে সকাল ১০ টায় শুরু হয় এ বাজার। যা রমজানের আগে সকাল ৮টায় শুরু হতো বলে জানান তিনি।
এই বাজারে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আহনাফ এসেছিলেন তরকারি কিনতে। স্কুল পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, “ডিম কিনলাম। লাউ ও পুদিনা পাতা নিলাম।”
১০ তারিখ থেকে পিসি কালচার রোডের এই বাজারের পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে জানিয়ে এখানকার উদ্যোক্তারা জানান, জিনিসপত্র শেষ হয়ে যায় ১২টার মধ্যে। প্রতিদিন তিন লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়। সোমবার ১টা গরু বিক্রি করে ৫৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী নানকসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগ এসব ভর্তুকি দিচ্ছে।
সুলভ মূল্যের বাজারে মূল্য
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় ঝুলছে মূল্য তালিকা। তাতে লেখা রয়েছে পেয়ারার কেজি ৭০ টাকা, স্ট্রবেরি ৪০০ টাকা, পাকা পেঁপে ১৬০ টাকা, সফেদা ১৩০ টাকা কেজি, লাল তরমুজ ৬০ টাকা, বরই ১০০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ৫০ টাকা ও বেল প্রতি পিসের দাম ৬০ টাকা।
এছাড়া সুলভ মূল্যের বাজারে গোল্ডেন আপেল ৩০০ টাকা কেজি, আপেল (ফুজি লাল) ২৭০ টাকা কেজি, আপেল (গালা) ৩০০ টাকা কেজি। মাল্টা ৩৫০ টাকা, নাশপতি ৩৭০ টাকা, আনার ৩৫০ টাকা, আঙ্গুর ২৯০ টাকা কেজি এবং কমলা ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
ফলের পসরা থেকে একটু পা বাড়ালেই দেখা মেলে সাজিয়ে রাখা পেঁপে। মূল্য তালিকা অনুযায়ী ২ কেজির দাম ৩০ টাকা। প্রতিটি লাউয়ের মূল্য ৪০ টাকা। চিচিঙ্গা প্রতি কেজি বিক্রয়মূল্য ৩০ টাকা। টমেটো ৪০ টাকা, কচুর লতি ৭৫ টাকা।
সেখানে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে ছোলা। মসুর ডাল ১০৮ টাকা, খেসারি ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৭০ টাকা, বেসন ৪৭ টাকা এবং ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি। সয়াবিন তেল ১৫৮ টাকা লিটার, ২ লিটার তেল বিক্রি করা হচ্ছে ৩১৫ টাকা। পেঁয়াজ ৯০ টাকা, আদা ১৩০ টাকা এবং আলু ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি ৪০ টাকা।
রুই মাছ ২৮০ টাকা কেজি, গ্রাস কার্প ৩০০ টাকা ও শিং মাছ ৪২০ টাকা কেজি। চিংড়ি মাছ ছোট ৭০০ টাকা, মাগুর ৩৮০ এবং কৈ মাছ ২৪০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগী ২১০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৯৫ টাকা এবং গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা দরে। তবে আজকে বাজারে গিয়ে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজারের মূল্য
দুপুর ২টার পর কারওয়ান বাজার ফুটপাতে দেখা যায় ৩০ টাকা আর ২০ টাকা পিস লাউ বিক্রি করতে। জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গোল বেগুন ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৯০ টাকা, লেবুর হালি ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শিম ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কারওয়ান বাজারে সবজির দোকানে রকমভেদে প্রতি পণ্য ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বাজারে আলু পাল্লা (৫ কেজি) ১৭০ টাকা। চায়না আদা -২০০ টাকা, বার্মা আদা ২২০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, দেশি রসুন ১৬০ টাকা, ডিম ৪৫ টাকা হালি।
ব্রয়লার মুরগী ২২০ টাকা কেজি, সোনালী অরিজিনাল ৩৩০ টাকা কেজি, পাকা পেঁপে ১৪০ টাকা কেজি, আপেল ফুজি ২৪০, সবুজ সাউথ আফ্রিকা আপেল ৩০০ টাকা, কমলা ২২০ টাকা কেজি, আঙ্গুর ৩২০ টাকা, স্ট্রবেরি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী বাজার
এ বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, ডিমের হালি ৪৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, রুই ৩২০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০, শিং ৪৫০, বড় সাইজের কৈ ২৬০ টাকা, বেগুন লম্বা গোল ১২০ টাকা, শসা ১৪০, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, ঢেড়স ১২০, লাউ ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০, লেবু ৬০ টাকা হালি, সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।