Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রোদ থেকে চুল বাঁচাতে কী করছেন

protect-hair-010624-01
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

প্রচণ্ড রোদে বাইরে গেলে আগে সানস্ক্রিন দিতে এখন আর কারও ভুল হয় না। কিন্তু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে চুল বাঁচাতে কী করছেন?

রোদের কারণে ত্বকের মলিন হয়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, দাগ হওয়া ঠেকিয়ে দিতে পারে সানস্ক্রিন। এখন বৈরী গরমের দিনে এসপিএফ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) মানে সানস্ক্রিন ছাড়া কেউ আর ঘরের বাইরে পা রাখেন না। রোদ থেকে ত্বকের সুরক্ষায় যদি এতো যত্ন করতে হয়, তাহলে বাইরে খোলা চুলে গিয়ে চুলের ক্ষতির কথা ভেবেছেন কখনও?  

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চুলের প্রোটিন নষ্ট করে দেয়। আবার রোদে চুলের রঙ পুড়ে যায় ও ফিকে হয়ে আসে।

মুম্বাই শহরের ডার্মাটোলজিস্ট, লেজার সার্জন ও কসমেটোলজিস্ট প্রীতি কার্দে শ্রিংগারপুরে  বলেন, “সূর্য থেকে চুল যেন সারা বছরই সুরক্ষিত থাকে।

“কিন্তু ভরা গরমে এই কাজ একটু জরুরি হয়ে ওঠে; কারণ এ সময় আলট্রাভায়োলেট রশ্মি বেশি আসে। ত্বকের মতোই চুলেরও ক্ষতি হয় রোদে।”

রিতু বিজয়ভার্গিয়া টু ডট ওহ ব্র্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি রোদ থেকে চুল বাঁচিয়ে রাখায় নজর দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “দীর্ঘদিন আর দীর্ঘসময় ধরে সূর্যর তাপের সংস্পর্শে থাকলে চুলের যে প্রাকৃতিক তৈলাক্ত ভাব থাকে তা নষ্ট করে দেয়। এতে চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে যায়, চুল একেবারে বিবর্ণ দেখায়।

“চুলের প্রোটিন আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কারণে ভেঙ্গে যায়, তাতে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।”   

অর্থাৎ চুলের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে বাইরে গেলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ঝরে যেতে থাকে, আগা ফেটে যায়, বিবর্ণ হয়ে যায়।  

এমনকি অতিরিক্ত রোদে মাথার তালুর ত্বকও আর ভালো থাকে না।

“মাথার তালু যেহেতু ত্বক তাই রোদে পুড়ে যেতে পারে”, বললেন কিওরস্কিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের প্রধান চারু শর্মা।

রোদের তাপ থেকে চুল বাঁচাবেন কী করে?

বাইরে রোদে রোদে ঘুরতে হলে অন্তত স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখা গেলেও সুরক্ষা মিলবে অনেকখানি। এছাড়া বাজারে আজকাল অনেক পণ্য আছে যা চুলকে ক্ষতিকর তাপ থেকে চুলকে বাঁচিয়ে রাখবে।  

“মাথায় চওড়া হ্যাট কিংবা স্কার্ফ এক ধরনের সুরক্ষা কবচ হয়ে ওঠে। সূর্য রশ্মি থেকে চুল ও তালু বাঁচাতে এর জুড়ি নেই”,বলেন চারু শর্মা।

আজকাল তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁয়ে যাচ্ছে অহরহ। এরকম দিনে সরাসরি মাথায় তাপ লাগে এমন খোলা জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

মুম্বাই শহরের ডার্মাটোলজিস্ট ও লেজার বিশেষজ্ঞ মেঘনা মৌর হুঁশিয়ার করে বলেন, “মনে রাখবেন, বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরণ সবচেয়ে বেশি হয়; তাই এই সময় রোদের সংস্পর্শে যত কম থাকা যায় তত ভালো।

“ভালো হয় সকাল ১০টার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যান অথবা বিকাল ৪টার পর যখন সূর্যের তেজ কমে আসে তখন ঘর থেকে বের হোন।”

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো তীব্র দাবদাহের দিনে চুল অবশ্যই ঘাড়ের ওপর রাখতে হবে। খোঁপা বা উঁচু করে চুল বাঁধা যেতে পারে বলে জানালেন চিকিৎসক শ্রিংগারপুরে।

চুলে কনডিশনার দিন নিয়মিত

প্রতিদিনই চুলে কনডিশনার লাগালে চুল ঝরঝরে ও আর্দ্র থাকে। এজন্য অবশ্য ভালো ব্র্যান্ডের কনডিশনারই দিতে হবে।

বাজারে আলট্রাভায়োলেট বা ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিতে স্প্রে, কনডিশনার অথবা সিরাম পাওয়া যায়।  ব্যবহারবিধি অনুসরণ করে ভালো ব্র্যান্ডের এমন পণ্য চুলে লাগানো যেতে পারে।

চুলের উপযোগী এসব সানস্ক্রিনে অনেক সময় জিংক অক্সাইড ও টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড থাকে, যা অতিবেগুনি রশ্মি ফিরিয়ে দিয়ে চুলকে সুরক্ষা দেয়।

“তাই অবশ্যই অক্সিবেনজন, টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড, জিংক অক্সাইড থাকা পণ্য কিনতে হবে”, বলেন চিকিৎসক মৌর।  

“ভিটামিন সি এবং ই থাকা নয়তো গ্রিন টি নির্যাস থাকা সিরাম কেনা ভালো। আরও ভালো হয় যদি  এই তিনটি উপকরণ রয়েছে এমন সিরাম কেনা যায়।”

রিতু বিজয়ভার্গিয়ার পরামর্শ হলো, আর্গন তেল প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে। যদি চুলের ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়েই যায় তাহলে আর্গন তেল থাকা পণ্য চুলে দিলে দ্রুত চুলের স্বাস্থ্য ফিরবে।

বাড়িতে চুলের যত্ন

বাড়িতে একটু সময় পেলে হাতের কাছে থাকা অনেক কিছু দিয়েও চুলের যত্ন নেওয়া যায়।

এই যেমন চুলে টক দই দেওয়া যেতে পারে। এক কাপ দই,  দুই টেবিল চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ অলিভ তেলের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণ মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ৩০ মিনিট পর চুলে শ্যাম্পু করে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।  

বিজয়ভার্গিয়া বললেন,  “এই মিশ্রণে ভরপুর প্রোটিন ও ল্যাকটিক এসিড থাকে। দই চুলকে মজবুত করে; সূর্যর আলোতে ভঙ্গুর বা বিবর্ণ চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনে। ইউভি রশ্মির কারণে মাথার ত্বকে চুলকানি ভাব থাকলে তাও সারিয়ে তোলে।”

বাগান করার শখ যাদের আছে তাদের অবশ্যই অ্যালোভেরা গাছও থাকবে। এছাড়া  কাঁচাবাজারে এবং সুপারস্টোরেও প্রায়ই অ্যালোভেরা বিক্রির জন্য রাখা হয়।

চিকিৎসক মৌর শিখিয়ে দিলেন চুলের যত্নে অ্যালোভেরা দেওয়ার উপায়।

এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেল, নারিকেল তেল, সি সল্ট, মধু একটি বাটিতে নিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। এই মিশ্রণ লাগিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট থাকতে হবে। তারপর চুল ধুয়ে ফেলা যায়।  

চুলের গ্রিন টি খুব উপকার করে এমন কথাও সবাই বলে। এক কাপ গরম গ্রিন টি নিয়ে আগে ঠান্ডা হতে দিন। শ্যাম্পু ও কনডিশনার দেওয়ার পরে চুলে ঠান্ডা গ্রিন টি ঠেলে দিন। এভাবে কয়েক মিনিট থেকে আবারও পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

ড. শ্রিংগারপুরে জানালেন, গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে; যা ইউভি রশ্মির ক্ষতি থেকে চুলকে সুরক্ষা দেয়।

মাথা বানিয়ে নিয়ে মানে তালু ও চুলের গোড়া আলতো হাতে মালিশ করে নিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। সপ্তাহে একদিন তেল দিয়ে চুলের গোড়ায় গোড়ায় কিছুক্ষণ মালিশ করে নেওয়া যায়। এভাবেও যত্ন করেও সূর্য রশ্মির ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

ড. মৌর বললেন, “নারিকেল তেল, আর্গন তেল, জবা ফুলেল তেল চুলের গোড়ার মালিশে উপকার মিলবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত