Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

জলে-স্থলে মাইক্রোপ্লাস্টিক, ঝুঁকিতে সুন্দরবনের প্রাণীরা

sundarbans-130224-06
[publishpress_authors_box]

সুন্দরবনের জলে-স্থলে এমনকি জলজ প্রাণীতেও মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। একে সুন্দরবনের প্রাণীদের জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, লোকালয়ের পাশের এলাকার চেয়ে সমুদ্রের পাশের বনের মাটি ও পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি।

গবেষকরা বলছেন, সারাবিশ্বে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলেই এমনটি হচ্ছে। প্লাস্টিক সমুদ্রের পানিতে মিশে ঢুকছে সুন্দবনে। এর প্রভাব পড়তে পারে সুন্দরবনের স্থল ও জলজ প্রাণীর জীবনচক্রে।

২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ‘স্পেশাল ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ক্যারেক্টারাইজেশন অফ মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন দি কোস্টাল ওয়াটার অ্যান্ড সেডিমেন্ট অফ দি বে অফ বেঙ্গল কোস্টাল, বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণাকর্ম চালান।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের পানিতে প্রতি লিটারে ২.২২ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। মাটিতে প্রতি কেজিতে গড়ে রয়েছে ৭৩৪ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক।

গবেষণার কাজে সুন্দরবনের পাঁচটি স্থানের পানি ও মাটি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে মোংলার মাটির প্রতি কেজিতে ৮২০ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এছাড়া করমজলের মাটিতে ৫৮০ ধরনের, হাড়বাড়িয়াতে ৪৪৭, হিরণ পয়েন্টে ৮৪০, দুবলার চরে ৮০০ এবং কটকায় ৯২০ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে প্রতি কেজিতে।

অন্যদিকে মোংলায় পশুর নদীর পানিতে প্রতি লিটারে ১.৭১ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এছাড়াও করমজলে পাওয়া গেছে ১.৭৬, হাড়বাড়িয়াতে ২.৬৩, হিরণ পয়েন্টে ২.৭০ এবং কটকায় ২.৩০ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক সনাক্ত করা হয়েছে প্রতি লিটারে।

এই গবেষণায় ১০০ মাইক্রোমিটার থেকে ৫ হাজার মাইক্রোমিটার আকারের প্লাস্টিক শনাক্ত করা হয়েছে।

এই গবেষক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান বলেন, সারা পৃথিবীতেই প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার হয়। এসব ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটি-পানির সঙ্গে মিশে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। আবার সমুদ্র থেকে জোয়ারের পানির সঙ্গে আসে সুন্দরবনের নদী ও খালে। আবার পর্যটক, বন বিভাগ ও বনজীবীরা তাদের কাজে প্রচুর প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার করছে। সেগুলো ব্যবহার শেষে বনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশছে পানি ও মাটিতে।

২০২২ সালে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক এ এন এম সাইমুল হুদা, নাজমুল হক নিলয়, গাউছিয়া ওয়াহেদুন্নেসা চৌধুরী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সুব্রত সরকারের ‘ট্রফিক ট্রান্সফার অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন দি একুয়াটিক ইকোসিস্টেম অব সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি গবেষণা করেন।

সেই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি হাঙ্গরের শরীরে ৬.১৬ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। চিংড়িতে ২.১০ ধরনের, কচ্ছপে ৩.৫৩, শামুকে ৩.০২ এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের প্রতিটির শরীরে ৪.২৬ ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

খুলনার বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল প্লাস্টিক ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বিভিন্ন সময় গবেষণায় দেখা গেছে সামুদ্রিক প্রাণীর পেটে কেবল মাইক্রোপ্লাস্টিক নয় প্লাস্টিক এবং পলিথিন পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের মাটি, পানি ও জলজ প্রাণীতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব সুন্দরবনের প্রাণী, বনজীবীসহ মানুষের জন্যে ক্ষতিকর। এটি ক্যান্সারসহ নানা রোগেরও কারণ।

সুন্দরবনে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের পক্ষে মত জানিয়েছেন তিনি।

একই দাবি সুন্দরবন একাডেমির। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ ধরে এই দাবি পুনরায় তুলেছে তারা।

২০০২ সালে সুন্দরবন একাডেমি প্রথম এই দিবসটির আয়োজন করে। তারপর থেকে বিভিন্ন সংগঠন দিনটি পালন করে আসছে।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় প্রথম রূপান্তর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, খুলনা প্রেস ক্লাব ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে প্রথম সুন্দরবন জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুন্দরবন রক্ষায় নানা উদ্যোগগ্রহণ সহ বিভিন্ন দাবীতে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহবায়ক এবং রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহকে যুগ্ম আহবায়ক করে সুন্দরবন জাতীয় সম্মেলন কমিটি গঠন করা হয়। ২০০২ সালে এই কমিটি সুন্দরবন একাডেমি গঠন করে।

সুন্দরবন একাডেমির বর্তমান পরিচালক স্বপন গুহ বলেন, এ বছর পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধের দাবি জানিয়ে সুন্দরবন দিবস পালন করছেন তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত