অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন শনিবার সকালে নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে চমৎকার একটি ছবি আপলোড করেছে। যেখানে লেখা, “হ্যালো শিলং”। ছবিটি শিলংয়ের নৈসর্গিক দৃশ্যের।
ভারতীয় ফুটবল দল আগামী ১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে একট প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে। যে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে শিলংয়ের বিখ্যাত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
এটি শুধু একটি প্রীতি ম্যাচ নয়। বরং এএফসি এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডের কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে ভারতীয় দলের জন্য একটি প্রস্তুতির সুযোগ। কোচ মানোলো মার্কেজ যে ম্যাচে নিশ্চয় অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রীকে আরেকবার পরখ করে নিতে চাইবেন।
ভারতীয় দলে যেমন সুনীল ফিরছেন। বাংলাদেশ দলেও তেমন অপেক্ষা ফুরাচ্ছে হামজা চৌধুরীর আগমনের। লাল-সবুজের জার্সিতে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামতে আগামী সোমবার বাংলাদেশে আসছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলার।
হামজার জন্য নিরাপত্তা বলয়
পুরো পরিবার নিয়ে হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে আসবেন। এগুলো পুরনো খবর। তবে নতুন খবর হচ্ছে এরই মধ্যে হামজার পরিবারের ৯ জনের বিমান টিকিট লন্ডনে পাঠিয়েছে বাফুফে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন হামজা চৌধুরী। সেখান থেকে মায়ের সঙ্গে হবিগঞ্জের বাহুবলের গ্রামের বাড়ি স্নানঘাটে যাবেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই ফুটবলার। যদিও হামজার জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডের লাফবরো শহরে। হামজাকে নিরাপত্তা দিতে তার আগের দিন সিলেট পৌঁছাবেন বাফুফের চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধি দলে থাকবেন বাফুফের সদস্য গোলাম গাউস, ইকবাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন ও কামরুল ইসলাম হিলটন। তারা সিলেট গিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। হামজা এবং তার পরিবারের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই এই প্রতিনিধি দলকে সিলেট পাঠাচ্ছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। এরমধ্যে তিনি দফায় দফায় হামজার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিজেও লন্ডনে দেখা করেছেন হামজার সঙ্গে। প্রতিনিধি দলের সদস্য গোলাম গাউস গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে হামজা ও হামজার পুরো পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে আমরা সিলেট গিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করবো। আমরা চেষ্টা করছি হামজাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশি ব্যবস্থা রাখা। আমরা হামজাকে নিয়েই আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরতে চাই।”
বাফুফের চাওয়া মঙ্গলবার বিকালের ফ্লাইটে হামজা ঢাকা ফিরে সরাসরি হোটেলে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। কিন্তু হামজার মা রাতের ফ্লাইটে ছেলে ও ছেলের বৌকে নিয়ে ফিরতে চান। বিকালের ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরতে হলে আগে বাসা থেকে বের হতে হবে। রাতে শেষ ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরলে আরো কিছুক্ষণ নিজ বাসায় সময় দিতে পারবেন হামজা। অনেক দিন পর হামজা গ্রামে মায়ের বাসায় ফিরছেন। তাই মা রাফিয়া চৌধুরী ছেলেকে বেশি সময় নিজ ঘরে রাখতে চাইছেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ
ঢাকায় ফেরার দিন ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে হামজার সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। বাফুফের একটি সূত্র জানিয়েছে হামজা একজন বড় মাপের ফুটবলার। ব্রিটিশ নাগরিক, তার স্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিক, সন্তানরাও আসবেন, মা রাফিয়া চৌধুরীও ব্রিটিশ নাগরিক। তিনিও থাকবেন। বিষয়টি ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাই তারা হামজাসহ পুরো পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাইছেন।
সংবাদ সম্মেলনে থাকবেন হামজা
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে টিম হোটেলে একটি সেশন থাকতে পারে হামজার। এর আগের দিন সৌদি আরবে ১৫ দিনের ক্যাম্প শেষে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ দল। বুধবার দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলনে নামবেন এক সময়ে ইংল্যান্ড যুব দলে খেলা হামজা। বসুন্ধরা কিংস এরেনায় হতে পারে ওই অনুশীলন।
কোচ হাভিয়ের কাবরেরা চাইছেন ২০শে মার্চ সকালে অনুশীলন শেষে দুপুরের ফ্লাইটে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়তে। হামজার পুরো পরিবার ভারতে যাবে খেলা দেখতে। সেভাবে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। ২৫শে মার্চ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশে ফিরবেন হামজা ও তার পরিবার। এরপর তারা এক দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন। এ সময় তিনি কিছু সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। ২৮শে মার্চ ঢাকা ছাড়ার কথা হামজা চৌধুরীর।
যেভাবে প্রস্তু হচ্ছে শিলং
ওদিকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১৫,১০০। এর মাঠের আয়তন ১০৩ x ৬৭ বর্গমিটার। এই স্টেডিয়ামটি ফুটবলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে শিলং প্রিমিয়ার লিগ, মেঘালয় স্টেট লিগ, আই-লিগ এবং আই-লিগ ২-এর মতো প্রতিযোগিতা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর ইন্ডিয়ান সুপার লিগের নতুন মৌসুমের আগে ডুরান্ড কাপের ম্যাচও এখানে আয়োজিত হয়, যা শিলংয়ের ফুটবল হটস্পট হিসেবে খ্যাতি আরও বাড়িয়েছে।
শিলং শিলং লাজং এফসির হোম গ্রাউন্ড, যারা আই-লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কিছু দিন আগে এই শহরটি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির ম্যাচও আয়োজন করেছে। এর সমৃদ্ধ ফুটবল সংস্কৃতি এবং উৎসাহী সমর্থকদের জন্য শিলং ভারতের দুটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য উপযুক্ত স্থান বলেই মানছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচ ঘিরে এরই মধ্যে শিলংয়ে শুরু হয়েছে বাড়তি উত্তেজনা।