বর্ষার ফ্যান্টাসিতে বাড়িতে বাড়িতে খিচুড়ি রান্নার ধুম পড়ে। যদিও মাঝেমধ্যেই খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া দরকার। কারণ শিশু থেকে বুড়ো সব বয়সীদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আদর্শ পদ হলো খিচুড়ি।
দুর্যোগকালেও খিচুড়ি রান্না করা হয়; কারণ খিচুড়ি সহজে রান্না করা যায়। চাল, ডাল, সবজি মিশিয়ে রান্না করা খিচুড়ি সব বয়সীদের জন্য সহজপাচ্য খাবার।
আপৎকালীন পরিস্থিতি হোক অথবা পেটের সমস্যা কিংবা রসনার তৃপ্তি মেটাতে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, চাহিদা এবং সামর্থ অনুসারে খিচুড়ি রান্না করা যায়।
সুগন্ধি বা দামি চাল দিয়ে খিচুড়ি হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই এই রান্নায়; সাধারণ চাল বা ভাতের চাল দিয়েও খিচুড়ি হয়। কয়েক পদের ডাল দিয়েও খিচুড়ি রান্না করা যায়; আবার শুধু মসুরের ডাল দিয়েও সুস্বাদু খিচুড়ি রান্না করা যায়।
সুষম খাবার খিচুড়ি
চাল ও ডালের সমন্বয় থাকে বলে খিচুড়ি প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকা পরিপূর্ণ আহার হয়ে ওঠে।
কম খরচের রান্না খিচুড়ি থেকে আঁশ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়।
শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ও মুখের রুচি ফেরাতে খিচুড়ি শক্তি জোগায়। ছয় মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সীদের জন্য এক কথায় ভালো মানের খাবার খিচুড়ি।
বন্যার সময় অনেক এলাকায় ডায়রিয়া দেখা দেয়। এ সময় তাই খিচুড়ি আদর্শ খাবার। খিচুড়িতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বদহজম, ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি উপশমে কাজ করে।
এছাড়া মুগ ডালের খিচুড়ি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
সার্জারির পর, সংক্রমণ বা জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে অর্থ্যাৎ অসুস্থ রোগীদের জন্য খিচুড়ি খুব ভালো সুষম খাবার।
ওটস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেলে শরীরে মিলবে ফাইবার ও প্রোটিনসহ আরো অনেক পুষ্টি। বাড়তি ওজন ঝরাতে ওটস খিচুড়ি কাজে দেবে। এক বাটি সাবুদানা খিচুড়িতে আছে ৫ গ্রাম, প্রোটিন ৮ গ্রাম ফাইবার।
ল্যাটকা খিচুড়ি
ল্যাটকা খিচুড়িকে পাতলা খিচুড়ি, পাইন্যা খিচুড়ি, ঢেলা খিচুড়িও বলা হয় অঞ্চল ভেদে। এই খিচুড়ি একটু নরম করে রান্না করা হয়।
পাতিলে চাল ধুয়ে মুগ-মসুর-খেসারির ডাল,পানি, লবণ, ১ কাপ পেঁয়াজ কুচি,আদা-রসুন বাটা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে নেড়ে মাঝারি আঁচে ৪০ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে।
সব নরম হয়ে এলে টালা জিরা গুঁড়া, কাঁচা মরিচ ও সামান্য লবণ দিয়ে নেড়ে নিতে হবে।
সবজি খিচুড়ি
মৌসুমী সবজি দিয়ে এই খিচুড়ি রান্না করা যায়। এই সময় বাজারে মিলছে আলু, বরবটি, পুঁই শাক, পটল, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, গাজর। এসব সবজি বড় টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
আধা কেজি চালে ১টি আলু, এক কাপ পরিমাণ সিম-ফুলকপি-বরবটি, এক কাপ পটল, ২টি গাজর, পুঁই শাক দিতে হবে। সবজি খিচুড়িতে ডাল দেওয়া যায়।
পাত্রে সামান্য সয়াবিন তেল গরম করে পুঁইশাক ও সবজিতে কাঁচা মরিচ, হলুদ গুঁড়া, লবণ মিশিয়ে হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন।
এরপর এলাচ, দারুচিনি, বাটা মশলাতে লবণ দিয়ে ভেজে তাতে ধুয়ে রাখা চাল-ডাল দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। আগে ভেজে রাখা সবজি মিশিয়ে আরও মিনিট খানেক ভাজুন।
চাল-ডাল ভাজা হলে গরম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। রান্না চুলা থেকে নামানোর ১০ মিনিট আগে ঘি ছড়িয়ে দিন।
কেউ চাইলে সরিষার তেল গরম করে আস্ত জিরা, আস্ত মরিচ এবং কারিপাতার ফোড়ন দিতে পারেন খিচুড়িতে।
ভুনা খিচুড়ি
ভুনা খিচুড়ি সাধারণত ঝরঝরে হয়। এর সঙ্গে আলাদা করে আচার, মাছ ভাজা বা মাংসের ব্যঞ্জনে তৃপ্তি আসে।
ভুনা খিচুড়ি মুগ ডাল দিয়ে করা হয়। রান্নার শুরুতে ডাল বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভেজে চালের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। ডাল ও চাল একসঙ্গে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ও গরম মসলা ভেজে নিন। পেঁয়াজে বেরেস্তার রঙ চলে আসলে আধা কাপ পানি দিয়ে দুই মিনিট নেড়ে আদা-রসুন বাটা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভুনা করে নিতে হবে। এবার সব গুঁড়া মসলা ও লবণ দিয়ে নাড়তে হবে তেল বার হয়ে আসা পর্যন্ত।
এরপর চাল-ডাল মিশিয়ে দিতে হবে মসলায়। ভালো করে নেড়েচেড়ে ভাজতে হবে ৮-১০ মিনিটের জন্য। চাল-ডালের পরিমাণ অনুপাতে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে পাতিল ঢেকে দিতে হবে।
রান্নার শেষে দিকে পাতিলের ঢাকনা তুলে খিচুড়িতে আস্ত কাঁচা মরিচ ছড়িয়ে বা গেঁথে বসিয়ে দিন। মরিচের মাথা সামান্য ভেঙে দিলে চমৎকার সুগন্ধ ছড়িয়ে যাবে খিচুড়িতে। খুব অল্প আঁচে খিচুড়ি দমে রেখে দিন আরও কয়েক মিনিট।
পঞ্চপদী ডালের খিচুড়ি
মসুর, মুগ, মাষকলাই, ছোলা, অড়হর – এই পাঁচ রকমের ডালের মিশ্রণে হবে পঞ্চপদী ডালের খিচুড়ি। সুগন্ধী চাল অথবা সাধারণ ভাতের চাল এবং সব ডাল দুই ঘণ্টা ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও গরম মসলা ভেজে নিন। আদা-রসুন বাটা দিয়ে আবার ভেজে নিন। টমেটো কুচি দিন। এরপর চাল ও ডাল দিয়ে ভাজতে থাকুন। চাল-ডাল ভাজা ভাজা পানি, কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচে রান্না হবে।
ফোড়নের জন্য অন্য চুলায় ফ্রাই প্যানে ঘি দিয়ে আস্ত জিরা ও শুকনা মরিচ দিন। পেঁয়াজ ও আদা কুচি দিয়ে ভাজুন। ভাজা গন্ধ বের হলে সামান্য লাল মরিচ গুঁড়া দিন। এই ফোড়ন খিচুড়িতে দিয়ে ২-৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর গরম-গরম পঞ্চপদী খিচুড়ি পরিবেশন করুন।
ওটস খিচুড়ি
শুকনা প্যানে ওটস ও মুগডাল হালকা করে টেলে আলাদা করে রেখে দিন।
এবার বড় পাতিলে তেল গরম করে তাতে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, আদা বাটা, জিরা গুঁড়ো ও লবণ দিয়ে কষাতে হবে। কম তেলে রান্না হলে সামান্য পানি দিয়ে মসলা কষাতে হবে। গাজর ও ব্রকোলি টুকরো এবং মটরশুঁটি মেশাতে হবে মশলায়।
ভেজে রাখা মুগডালে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর ওটস মিশিয়ে দিন। খিচুড়ি কতটা ঘন বা পাতলা হবে সেই অনুপাতে পানি দিন। কম আঁচে রান্না হবে। সবজি ও ডাল সেদ্ধ হয়েছে কি না দেখে নিন।
পানি প্রায় টেনে আসলে কাঁচামরিচ ফালি, টমেটো কুঁচি, ধনিয়া পাতা ও গরম মসলার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ দমে রাখুন।
সাবুদানা খিচুড়ি
একটি ছাকনিতে সাবুদানা নিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। ৬-৮ ঘণ্টা সাবুদানা ভিজিয়ে রেখে বাড়তি পানি ফেলে দিতে হবে। বেশি পানি দিলে সাবুদানা গলে যাবে। পরিমাণ মতো এবং নির্দিষ্ট সময় ভেজালে সাবুদানা সঠিক ভাবে ফুলে ওঠে, কিন্তু গলবে না। একটি সাবুদানা হাতে নিয়ে টিপে দেখতে হবে পিষে যাচ্ছে কিনা। পিষে গেলে সাবুদানা খিচুড়ি বানানোর জন্য ঠিক মতো নরম হয়েছে।
এরপর চিনি, ভাঙা বাদাম ভাজা মেশাতে হবে। লেবুর রস দিতে হবে।
এবার চুলায় প্যান গরম করে তাতে তেল দিন। গোটা জিরা এবং টুকরা করে কাটা সেদ্ধ আলু মেশাতে দিন। এবার কারি পাতা এবং কাঁচা মরিচ মিশিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন।
এখন সাবুদানা মেশাতে হবে। স্বাদমতো লবন দিয়ে ভাল করে নাড়তে হবে। সাবুদানার খিচুড়ি ঢেকে রাখতে হবে ৭-৮ মিনিটের জন্য। পরিবেশনের আগে ধনেপাতা এবং বাদাম ভাজা ছড়িয়ে দিন।