ঢাকার সূত্রাপুরে আশিকুর রহমান খান অপু হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন– মঞ্জুরুল আবেদীন রাসেল ও নওশাদ হোসেন মোল্লা রবিন।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে হাইকোর্টে খালাস পাওয়া মোহাম্মদ আলী মুন্নাকে যাবজ্জীবন ও ইফতেখার বেগ ঝলককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী, সরওয়ার আহমেদ ও মোশতাক আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৩ মে সন্ধ্যায় সূত্রাপুর থানার ৪/১ ওয়ারী হেয়ার স্ট্রিটের বাসা থেকে সন্ত্রাসীরা অ্যাডভোকেট রইস উদ্দিনের ছেলে আরিফুর রহমান খান সেতুকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারতে মারতে স্থানীয় সিলভারডেল স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সেতুর দুই ভাই– আশিকুর রহমান খান অপু ও আতিকুর রহমান খান বাপ্পী সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এরপর তিন ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তিন ভাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার অপুকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুই ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান।
এ ঘটনায় নিহতের বোন আতিয়া খান কেয়া বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাকসুদুর রহমান ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট মামলায় সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আসামিরা ১২ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শেষে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০১২ সালের ১৩ মার্চ অপু হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ে আতিক আহমেদ শিপলু নামে একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
নিম্ন আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। অন্যদিকে আপিল করেন আসামিরা।
আসামিদের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৭ মে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে দুইজনকে খালাস দেয়। বাকি দুজন পলাতক থাকায় তাদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি আদালত।
বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– মাহবুব আলম, মোহাম্মদ আলী মুন্না, ইফতেখার বেগ ঝলক ও বিপ্লব চন্দ্র দাস।
এদের মধ্যে হাইকোর্ট মুন্না ও ঝলককে খালাস দিয়েছিল। বাকি দুই আসামি মাহবুব আলম ও বিপ্লব পলাতক।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি। অন্যদিকে খালাস পাওয়া দুইজনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সেই আপিলের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পাশাপাশি হাইকোর্টে খালাস পাওয়া দুজনকে কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ।