Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সিলেটে আবার বন্যা

গত মাসে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সব নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
গত মাসে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সব নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

নতুন এ বন্যায় সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলও পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসন বলছে, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৯ উপজেলার ৪৩৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮ জন। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটিতেও কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত মাসে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সব নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সেই পানি ঢুকে পড়েছিল শহরের নিম্নাঞ্চলে। 

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম রবিবার দুপুরে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় প্রায় ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৪৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৭০০ হেক্টর কৃষি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তিনি জানান, গোয়াইনঘাটের ১৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার ৬০০ মানুষ। পানি উঠে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়কের কয়েকটি স্থানের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দুটি সেতুর কাজ চলতে থাকায় গোয়াইনঘাট থেকে সালুটিকর সড়কে আগে থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গত মাসের বন্যায় প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিচার উপরে।

একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপরে।

রবিবার দুপুর ১২টায় সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার নীচে।

এছাড়া লোভা, পিয়াইন, ডাউকি, ধলাই, সারিগোয়াইনসহ প্রত্যেকটি নদীর পানি বেড়েছে। তবে রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অন্যান্য পয়েন্টে পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সকাল সন্ধ্যাকে জানান, সিলেটে প্রচুর  বৃষ্টি হচ্ছে। সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য নদীগুলোর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে শনিবার থেকেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন সকাল সন্ধ্যাকে জানান, শনিবার সকাল ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৮০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আগামী দুই দিন সিলেট অঞ্চলে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় ৪৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮ জন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা বেশি প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। প্রতিটি উপজেলায়ই আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতার জন্য বরাদ্দ রয়েছে।”

জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটিতেও কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত