Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

সিলেট অঞ্চলে সব নদীর পানি কমেছে

ss-sylhet-flood-24062024-1
[publishpress_authors_box]

উজানের ঢল এবং বৃষ্টি কমায় সিলেট অঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি কমেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্র এখনও অবস্থান করছেন ৩৩ হাজার ১১৫ জন মানুষ।

সিলেট নগরের অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমেছে। নগরের ৩টি ওয়ার্ডের ৫০০ মানুষ বন্যা কবলিত রয়েছে, যাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৩০০ জন। 

সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াইসহ সবকটি নদীর পানি কমায় কিছু এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ শুরু করেছে এসব জেলার প্রশাসন। সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির জন্য চালু করা হয়েছে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আছেন আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন।

আমিনুল ইসলাম আমিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসেছি। সোমবার সিলেটের ৩টি স্পটে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের ৫টি স্পটে ও সিলেটের ১টি স্পটে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করব।”

বন্যায় সিলেটের ওসমানীগর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১ লক্ষ ৯২ হাজার জন। উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলার ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ৩ হাজার ১৯৪ জন।

বন্যায় সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বন্যা ক্ষতি হয়েছে ছাতক উপজেলায়। উপজেলার ৫৪৭টি গ্রামে ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। জগন্নাথপুর উপজেলায় ৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৪০০ জন আশ্রয় নিয়েছে।

সিলেট

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের সোমবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপরে। সুরমার পানি একই সময়ে সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপরে। জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে। বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা গতকাল ছিল বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপরে।  

সোমবার সিলেটের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৫১ মিলিমিটার।

সিলেট নগরের বন্যাকবলিত ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি ওয়ার্ড থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। নগরের ৩টি ওয়ার্ডের ৫০০ জন বন্যায় আক্রান্ত রয়েছে। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৩০০ জন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, নগর এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকেও বেশিরভাগ মানুষ চলে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে নামছে। নীচের দিকে প্রায় সব এলাকা প্লাবিত থাকায় নদীর পানি ধীর গতিতে নামছে।

এবার সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নই বন্যায় কবলিত হয়। সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত হয় ওসমানীনগর উপজেলা। এই উপজেলায় বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯২  হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রেও সবচেয়ে বেশি এই উপজেলার মানুষ। ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩ হাজার ১৯৪ জন।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার ১ হাজার ৩৬৭টি গ্রামে বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৮ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ জন। সিলেট নগরে ৩টিসহ মোট ২৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে আশ্রয়রত রয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৪ জন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত তিন দিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোসহ বন্যা উপদ্রুত এলাকায় রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর।

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সুরমা, যাদুকাটা, কালনী, নলজুরসহ সবকটি  নদীর পানি কমছে। শহরের বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার ১৩০২টি গ্রামে বন্যা আক্রান্ত ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন। সোমবারও আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৯ হাজার ৯৬৬ জন। রবিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ১৩ হাজার ৬৪৯ জন; শনিবার ছিলেন ২০ হাজার ১২৬ জন। এর আগের দিন শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ২২ হাজার ৬৩৭ জন।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, প্রতিটি উপজেলায় নদীর পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত তিন দিনে প্রায় ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। বন্যা কবলিত প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে। 

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে কুশিয়ারা ও জুড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সাত উপজেলা জুড়ি, বড়লেখা কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নে বন্যা আক্রান্ত ৩ লাখ ৪ হাজার ৪৭০ জন।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কুলাউড়া উপজেলার ১১৬টি গ্রামে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলার ১৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ৮ হাজার ৬৯০ জন। ইতোমধ্যে ৭৮৭ মেট্রিক টন চাল, ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে আরও ৮৫৪ মেট্রিক টন চাল, ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৩৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ও গো খাদ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.আব্দুস সালাম চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৮২৫ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১২০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় ৫০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৭৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির জন্য চালু করা হয়েছে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খোয়াই নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার, মার্কুলি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ও কালনী কুশিয়ারা আজমিরিগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও এখনও তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নবীগঞ্জ,বাহুবল ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৭২৩টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২ হাজার ৮৫৫ জন। ১ হাজার ৩০৫ জন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু সোম মহান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ইতোমধ্যে ৫১০ মেট্রিক টন চাল ও ২৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলাগুলোতে উপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২১০ মেট্রিক টন চাল ও ৫৪৫ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত