টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে সব নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে আবার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে। ইতিমধ্যে বিভাগের কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মাস খানেক আগে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা হয়েছিল সিলেট অঞ্চলে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর মধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল কুশিয়ারার পানি।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপসহকারী আবহাওয়াবিদ অমর চন্দ্র তালুকদার জানান, বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা) সিলেটে ২০৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জাফলং-রাধানগর সড়কসহ বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। আমরা বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজারের বুধবার বিকালের তথ্য অনুযায়ী, মনু নদীর পানি রেলওয়ে ব্রীজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ও চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) জয়নাল আবেদীন জানান, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
কমলগঞ্জ-আদমপুর এবং শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমসেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার খুশালপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, মুন্সিবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চলের আউশ ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে খোয়াই নদীর পানি চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তে বিপৎসীমার ২০০ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জে ১২৩ সেন্টিমিটার এবং হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার এবং মার্কুলী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালনী-কুশিয়ারা নদী আজমিরীগঞ্জে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি জানান, হবিগঞ্জ সদর ও চুনারুঘাট উপজেলায় কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রয়েছে। খোয়াই নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য দুই হাজার জিও এবং ছয় হাজার সিনথেটিক বস্তা মজুদ রাখা হয়েছে।