সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আড়াইশ থেকে তিনশ জনকে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠন করা তদন্ত কমিটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলাটি করেছেন বলে জানান জৈন্তাপুর থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম।
পরদিন রবিবার বিকেলে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ তথ্য নিশ্চিত করেন জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, প্রতিনিধিদল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ কোয়ার্টারগুলো ঘুরে দেখেন। ঘটনার দিন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন। এই ঘটনার জন্য চিকিৎসকদের কোনও অবহেলা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হামলার ঘটনায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সকাল সন্ধ্যাকে জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিনিধি দল মূলত দুটি কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রথমত ঘটনার পর ভীত সন্ত্রস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা চিকিৎসকদের মানসিক সহায়তা দেওয়া। যেন মানুষের সেবাপ্রাপ্তিতে বিঘ্ন না ঘটে। দ্বিতীয়ত জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে ঘটনার ভয়াবহতা ও গুরুত্ব তুলে ধরে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনা বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবহিত। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশে থেকেও তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
মামলার কথা জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সালাহ্উদ্দিন মিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, অজ্ঞাতনামা আড়াই থেকে তিনশ’ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে হামলা ও ভাঙচুরের সময় হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক হিল্লোল সাহা এবং স্টাফ আব্দুস সাত্তারকে মারধর করা হয়। ঘটনার সময় জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ডিউটিতে ছিলেন।
হামলায় একটি সরকারি জিপে আগুন ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়; এতে প্রায় ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সালাহ্উদ্দিন মিয়া জানান, অভিযোগে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ওপর হামলা, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর, জিপ গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সিলেট-জাফলং সড়কের ৪নং বাংলাবাজার রাংপানি এলাকায় একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পানিতে পড়ে যায়। এতে চারজনের মৃত্যু হয়। প্রাইভেট কারে থাকা চার যুবকই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তাদের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পরই চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় স্থানীয়রা তাদের সিলেট নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চান।
অকেজো থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স দিতে না পারলে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন। একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেন তারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।