সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার চারজনকে মৃত ঘোষণা করার পরই জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
এসময় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সরকারি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে জানান, একটি প্রাইভেটকার খাদে পড়ে হতাহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা শুক্রবার রাত ১টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় স্থানীয়রা তাদের সিলেট নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চান।
অকেজো থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স দিতে না পারলে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন। একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেন তারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তাজুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনও লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালে এমন হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরামের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র ডা. নিরুপম দাশ ফেইসবুকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকরা ভীত দায়িত্ব পালনে। এভাবে হাসপাতালে আক্রমণ করে, মধ্যযুগীয় নির্মমতা চালালে কোনও চিকিৎসক আর ঝুঁকি নিবে না।
ইকবাল হাসান নামে আরেজকজন লিখেছেন, মৃতদের জীবন দেওয়া তো আমাদের কাজ না। এ ঘটনায় গভীর নিন্দা জ্ঞাপন করে অভিযুক্তদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার যুবকদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করলে উপস্থিত লোকজন ইসিজি করার কথা বলে। ইসিজিতেও মৃত্যু নিশ্চিত হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসকের উপর হামলা করে। তারা ভাঙচুর চালিয়ে বিভিন্ন সম্পদ নষ্ট করেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালাহউদ্দিন মিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, গভীর রাতের হামলায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হিল্লোল আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শমতো এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান সালাহউদ্দিন মিয়া।
শুক্রবার রাতে জৈন্তাপুরের ৪ নম্বর বাংলাবাজার ব্রিজের পাশে রাংপানি এলাকায় একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা ৪ জনকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত চারজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল আহমদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল চত্বরে জমায়েত হন। এসময় কিছু দুর্বৃত্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরনো মতবিরোধের জন্য এ সুযোগ কাজে লাগায়।
ছাত্রলীগের কোনও নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।