শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে নানা মামলায় আসামি হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা; সেই তালিকায় যোগ হলো সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের নাম।
সোমবার দ্রুত বিচার আইনে এই মামলা হয়েছে সুনামগঞ্জের আদালতে। মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ৯৯ জনকে। তার মধ্যে সুনামগঞ্জের সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি কয়েকজন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি করেছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা এরোয়াখাই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাফিজ আহমদ (৪৫)। তিনি নিজেকে গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌর শহরে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জহুর আলীর বড় ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিচারক নির্জন মিত্র মামলাটি এজাহার হিসাবে নথিভূক্ত করার জন্য সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট পতনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাতে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের গুলিতে সারাদেশে কয়েকশ নিহত এবং বহু আহত হয়।
সুনামগঞ্জের এই মামলার এজাহারে বাদী বলেছেন, গত ৪ আগস্ট সকালে পুলিশে গুলিতেেআহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলনে নামা তার ছোট ভাই জহুর আলী, রিপন মিয়াসহ কয়েকজন।
এজাহার অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের স্টেশন রোডের ফুলকলি শো রুমের সামনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশ সেখানে তাদের ওপর চড়াও হয়। জহুর আলীর বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি করেন সুনামগঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাশ। একটি অটোরিকশার ভেতরে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থী রিপন মিয়াকে টেনে বের করে এনে তার পায়ে গুলি করা হয়।
সাবেক পরিকল্পমন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নাদের বখত, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক খায়রুল হুদা চপল, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রদীপ রায়, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিন, সুনামগঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস ও সদর মডেল থানার সাবেক ওসি খালেদ চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সোয়েব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ অপু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন, দৈনিক কালের কন্ঠের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি শামস শামীম ও আরটিভির জেলা প্রতিনিধি বিন্দু তালুকদার।
এজাহারে ৯৯ জনের নাম দেওয়ার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে ।
সাবেক যুগ্ম সচিব মান্নান ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদেও স্থান পেয়েছিলেন তিনি।
মান্নান ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পরিকল্পনামন্ত্রী করা হয়েছিল তাকে। সর্বশেষ এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন।