ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে আসছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার অন্তত ১৬ লাখ মানুষ।
সিলেটে বন্যাদুর্গত ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন; এর মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৫০ হাজার। আর সুনামগঞ্জে পানিবন্দি ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৭ জন। জেলা প্রশাসনের এই তথ্য অনুযায়ী, দুই জেলায় বন্যাদুর্গতের সংখ্যা ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ জন। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সিলেটের ১৩টি ও সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার সবকটি এখন বন্যা কবলিত। সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টি ওয়ার্ড বন্যা কবলিত। সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায়ও বাড়ছে বন্যার পানি।
মৌলভীবাজারের ৫ উপজেলা- জুড়ি, বড়লেখা কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়ার পাশাপাশি মেঘের গর্জনে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।
সিলেটে ৬৫৬টি ও সুনামগঞ্জে ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা দুর্গতদের অনেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সুরমা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমলেও কুশিয়ারাসহ সিলেট অঞ্চলের অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। বুধবার সকাল থেকে সিলেটে নদীগুলোর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জেও নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পরিস্থিতি বেশি খারাপ। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি দেখা গেছে। মানুষের বাসাবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুর্গতরা।
সিলেট
সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয় ৭৭ মিলিমিটার।
সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বুধবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৭৯ সেন্টিমিটার উপরে।
জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপরে। সারি নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইনের পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নতুন করে শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে কুশিয়ারা নদীর পানি। শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার বিপৎসীমার নিচে ছিল।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। সীমান্তবর্তী এলাকায় বৃষ্টি কম হওয়ায় সারি ও সারিগোয়াইন নদীর পানি কমেছে। উঁচু এলাকা থেকে পানি নিচু এলাকায় নামতে থাকায় নগর ও ভাটি এলাকার উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি বাড়ছে।”
সিলেট নগরের মাছুদিঘিরপাড়, তালতলা, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, তেরোরতন, উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ইসলামপুর, তেমুখী, শামীমাবাদ, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজার, তোপখানা, কাজিরবাজার, কামালগড় এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। অনেক বাসা, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী কালীঘাট ও কাজিরবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে পড়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বুধবার দুপুরে সিসিকের ৩৭ ও ৩৮নং ওয়ার্ডের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জানান, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।
নগরের দুর্গত এলাকায় কয়েকটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে সব কাজ তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান মেয়র।
জেলার ১৩টি উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নই বন্যায় কবলিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্গত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ক, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক, সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়ক এবং গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট-তামাবিল সড়ক, কানাইঘাট-দরবস্ত-সিলেট সড়ক, কানাইঘাট-বোরহান উদ্দিন সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের বিভিন্ন স্থান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জেলার সীমান্ত উপজেলা গোয়াইনঘাটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ইতিমধ্যে জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫৬টি।”
জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ড এবং জেলার ১৩ উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। জেলায় ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৫০ হাজার।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট নগরে ৮০টিসহ জেলায় মোট ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো.মহিববুর রহমান বুধবার বিকালে নগরীর মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সুরমা নদীতীরবর্তী ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বরইকান্দিতে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রকে বন্যার পানি থেকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল বরইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে কাজ শুরু করেছেন।
সুনামগঞ্জ
বুধবার সকালে সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দিরাই উপজেলায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার সবকটি উপজেলা এখন বন্যা কবলিত হয়েছে। তবে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি বেশি খারাপ। দুই উপজেলারই শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। দুর্গতরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুই উপজেলার প্রধান সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদর ও সিলেটের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুই উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক মঙ্গলবার বিকালে ছাতক পৌরসভার নিমজ্জিত এলাকা ঘুরে দেখেন এবং কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
সুনামগঞ্জ শহরের নদী তীরের এলাকা সাহেববাড়ী ঘাট, তেঘরিয়া, আরপিন নগর এলাকায় পানি স্থিতিশীল থাকলেও মঙ্গলবার রাত থেকে ষোলঘর, নতুনপাড়া, শান্তিবাগ ও হাজীপাড়া আবাসিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাত থেকে জেলার দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় নতুন করে আরও অন্তত ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর, জগন্নাথপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এসব উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় ঘর-বাড়িতে নতুন করে পানি ঢুকেছে। ছাতক-সিলেট, ছাতক-সুনামগঞ্জ, দোয়ারাজার-সুনামগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলার ইউনিয়নের সড়কগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের অনেক স্থান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকালের চেয়ে কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পয়েন্টে নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। বন্যা কবলিতদের উদ্ধারের জন্য নৌকা প্রস্তুত আছে। যারা আটকা পড়েছেন তাদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।”
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বুধবার সন্ধ্যায় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রামের বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৭ জন। ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ হাজার ৪২৯ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের পাইবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বুধবার সকাল থেকে ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার, মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার এবং জুড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
“উজান থেকে পানি নামায় ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জেলার সবকটি নদী পানিতে পরিপূর্ণ। সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরায় মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় ও আমাদের এখানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।”
কুলাউড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও কুলাউড়া পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। হাকালুকি হাওর এলাকার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া জয়চন্ডি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, পৌরসভার ১২টি গ্রাম, সদর ইউনিয়নের ২টি গ্রাম, ব্রাহ্মণবাজারের ৫-৬টি গ্রামসহ ভাটেরা, বরমচাল ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন মৌলভীবাজার ২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অব্যাহত বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৭ উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বড়লেখা উপজেলার চারটি, জুড়ি উপজেলার তিনটি, কুলাউড়া উপজেলার ৩টি, সদর উপজেলার ৪টি এবং রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে।
“জুড়ি, বড়লেখা এবং কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”