Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর হামাও বিদ্রোহীদের দখলে, এরপর কী

sYRIA_hAMA_rEBEL
[publishpress_authors_box]

আলেপ্পোর পর এবার সিরিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হামা দখল করে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহীরা। আটদিন আগে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর পর এটি বিদ্রোহীদের আরেকটি বড় সাফল্য এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জন্যও বড় ধাক্কা।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তীব্র সংঘর্ষের পর বিদ্রোহীরা হামা শহরে প্রবেশ করে। এ অবস্থায় সেনারা শহর থেকে সরে যায়।

সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও শহুরে যুদ্ধ এড়াতে সৈন্যদের নতুনভাবে মোতায়েন করা হচ্ছে।

সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ঘোষণা করেছেন, হামা এখন পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

আল জাজিরার রিপোর্টার রেসুল সেরদার এটিকে বিদ্রোহীদের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নিয়েছিল। আর এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখল করল।

বিদ্রোহীরা হামার সামরিক বিমানবন্দরও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এটি সিরিয়ার অন্যতম বড় বিমানবন্দর এবং সরকারি বাহিনীর হামলার জন্য ব্যবহার করা হতো।

সেরদার আরও জানান, বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর ফ্রন্ট লাইন ভেঙে শহরের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। এ সংঘর্ষের ফলে হামার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসিন্দা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

গত ২৭ নভেম্বর (বুধবার) থেকে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয়। গত রবিবার তারা আলেপ্পো দখল করে এবং মঙ্গলবার হামার উত্তরের কৌশলগত একটি পাহাড়ে পৌঁছায়। এরপর তারা শহরের পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়ে অগ্রসর হয়।

দেশের উত্তরাঞ্চলে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর দ্রুত পতন ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কারণ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, যারা প্রেসিডেন্ট আসাদের মূল যুদ্ধশক্তি হিসেবে কাজ করছিল, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছে।

সিরিয়ার দীর্ঘ ১৩ বছরের যুদ্ধের সবচেয়ে তীব্র সময়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাদের সহায়তায় তিনি বেশিরভাগ অঞ্চল ও প্রধান শহর পুনরুদ্ধার করেছিলেন।

তবে ২০২০ সালে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির পর আসাদ সরকার ইদলিব পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা বাদ দেয়। সেই ইদলিব থেকেই এখন আবার বিদ্রোহীরা যুদ্ধ শুরু করেছে।

রাশিয়া ২০২২ সাল থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। এদিকে, হিজবুল্লাহর অনেক সিনিয়র নেতা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে। ফলে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ এই দুই মিত্র শক্তি আসাদ সরকারের বাহিনীকে সহায়তায় সেভাবে মনোনিবেশ করতে পারছে না, যার সুযোগ বিদ্রোহীরা নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এক ভিডিও বার্তায় হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি ইরান-সমর্থিত আরেক বাহিনী ইরাকের হাশদ আল-শাবিকেও সংঘাতে জড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।

ইরাকি ও সিরীয় সূত্র জানিয়েছে, কিছু ইরাকি যোদ্ধা এই সপ্তাহের শুরুতে আসাদকে সহায়তা করতে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। হাশদ আল-শাবির যোদ্ধারা সিরিয়া সীমান্ত বরাবর মোতায়েন হয়েছে। তারা বলেছে, এটি শুধুমাত্র ইরাকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

জুলানি ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেন, “আমরা আবারও তাকে আহ্বান জানাই, ইরাককে সিরিয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত নতুন যুদ্ধে জড়ানো থেকে দূরে রাখুন।”

সিরিয়ার কোন অঞ্চল কাদের নিয়ন্ত্রণে।

হামা কেন গুরুত্বপূর্ণ

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট গাইস্ট পিনফোল্ড বলেন, বিদ্রোহীরা যদি হামা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, এটি প্রতীকী এবং কৌশলগত উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, “হামা হল সুন্নিদের সশস্ত্র ইসলামপন্থী প্রতিরোধের জন্মস্থান, যা বাশার আল-আসাদ এবং তার পিতার বাথ পার্টির বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল।”

হামা ধরে রাখতে পারলে হোমস এবং দামেস্কের রাস্তাও উন্মুক্ত হয়ে যাবে। হোমস সিরিয়ার কেন্দ্রীয় প্রধান শহর এবং এটি দেশের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলগুলোর সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করে।

এ ছাড়া, হামা শহরটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মুহরাদা এবং সালামিয়ার নিয়ন্ত্রণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মুহরাদা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর এবং সালামিয়া ইসমাইলি শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় আবাসস্থল।

হামা প্রদেশটিও লাতাকিয়া উপকূলীয় অঞ্চলের সীমানা সংলগ্ন, যা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শক্তিশালী সমর্থন ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হামা শহর সরকারি নিয়ন্ত্রণেই ছিল।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো স্যামুয়েল রামানি বলেন, দামেস্ক সম্ভবত সাময়িকভাবে সেনাদের অন্যত্র মোতায়েন করছে, যেন শহুরে সংঘর্ষে বড় প্রাণহানি এড়ানো যায়। এরপর প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা নিয়ে হামা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

স্যামুয়েল রামানি জানান, “রাশিয়া ও সিরিয়ার জন্য দ্রুত গতিবেগ ফিরে পাওয়া কঠিন হবে, কারণ বিদ্রোহীরা এখন হামা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হোমসে বড় আক্রমণ শুরু করবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি হোমস দখল হয়, তবে দামেস্কও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।”

সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া কী বলছে

রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া সিরিয়ার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে এবং সিরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

তিনি বলেন, “আমরা এখন সিরিয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সিরীয় বন্ধুদের, বিশেষ করে দামেস্কের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে।”

পেসকভ আরও বলেন, “পরিস্থিতি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে সিরীয় কর্তৃপক্ষকে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা এবং হুমকি নির্মূল করতে কতটুকু সহায়তা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত