সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ১০ দিন পর বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে আসেন তাবিথ আউয়াল। নতুন সভাপতি বাফুফেতে পা রাখার প্রথম দিনে তেমন কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছিল না বললেই চলে। শুধু নতুন সভাপতিকে রজনীগন্ধা ও গোলাপ দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাফুফের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।
ফেডারেশনে তাবিথ আউয়ালের আগমনের প্রথম দিনে সিনিয়র সহসভাপতি, ৪ সহ-সভাপতি ও সদস্য মিলিয়ে উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির ১৮ জন।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার একদিন পর ২৭ অক্টোবর তাবিথ আউয়াল দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্য রওনা হন। এএফসি কংগ্রেসে তিনি বাফুফের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
শুরুর দিনে বাফুফের সব কর্মকর্তা, কর্মচারীর সঙ্গে একটি পরিচিত সভা করেছেন প্রথমে। এরপর পর্যায়ক্রমে সাফজয়ী মেয়েদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
ভবনে পা দিয়ে প্রথম দিনে ফুটবল নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি বা কোনও আশ্বাসের কথা বলেননি নতুন সভাপতি। বাফুফের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হবে ৯ নভেম্বর। ওই সভা শেষেই তিনি ঘোষণা দেবেন নতুন দিনের পরিকল্পনার।
বাফুফে ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করিনি। আগামী ৯ নভেম্বর আমাদের প্রথম নির্বাহী কমিটির সভা হবে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী চার বছরের জন্য আমাদের যাত্রা শুরু হবে। আগামী দিনে আমরা আরও গুরুত্ব নিয়ে বসবো নির্বাহী কমিটি ও সাব-কমিটিগুলো সহ। আজকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা কারও সঙ্গেই করিনি।”
বর্তমান কমিটিতে কোনও পছন্দের প্যানেল ছিলনা তাবিথ আউয়ালের। কিন্তু সবার সঙ্গে ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান, “আমরা খেলোয়াড়সুলভ মনমানসিকতা নিয়ে আগামী চার বছর এগিয়ে নিতে চাই, সেটারই একটা বার্তা আমরা দিতে এসেছি।”
বাফুফে সভাপতি হয়েই তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলকে। এই দলের আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে যদিও পরিস্কার করে কিছু বলেননি। তবে ৯ নভেম্বরের পরই তিনি সেটা জানাবেন, “সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নারী ফুটবলাররা অবশ্যই কিছু না কিছু প্রাপ্য। ওদের প্রাপ্য ও সাফল্য নিয়ে নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন করে আমরা কিছু করবো। এখন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, যা হওয়ার হবে নির্বাহী কমিটির সভায়। ”
তবে সাফ জয়ীদের জন্য একটা পুরস্কার ঘোষণার আভাস দিলেন তিনি, “আমি পরিস্কার করে জানাতে চাই বাফুফের পক্ষ থেকে ৯ তারিখে একটা ঘোষণা আসবে। এছাড়া তার সঙ্গে আমরা জানতে পেরেছি অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নারী দলকে সংবর্ধনা দিতে চায় এবং উপহার দিতে চায়। বাফুফের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা আসবে যা নির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে যাতে আর্থিক স্বচ্ছ্তার বিষয়টা নিশ্চিত হয়।”
এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালে তাবিথ আউয়াল ছিলেন সহ-সভাপতি। কিন্তু আবারও নতুন পরিচয়ে আসতে পেরে খুশি তিনি, “চার বছর আগে অক্টোবর মাসে আমি ফেডারেশন থেকে বিদায় নিয়েছিলাম। চার বছর পর আবার এসেছি। আমার সঙ্গে বিগত কমিটি কয়েকজন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে কিছু নতুন মুখ প্রথমবারের মতো ফেডারেশনে এসেছেন। আর আমার মতোই কয়েকজন এক বা দুই টার্ম বাইরে থেকে আবার ফেরত এসেছেন। আমি মনে করি এরকম তিন রকমের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে যাচ্ছি আগামী চার বছরে। এটা আমাদের নিশ্চয় সফলতা এনে দিবে। আমরা খুব উদগ্রীব হয়ে আছি একসঙ্গে কাজ করার জন্য।”
তিনি যোগ করেন, “বাফুফে ভবনে এসে নিশ্চয় খুব ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আমি আমার বাসায় ফিরে এসেছি। ফিরেছি এমন একটা সময়, যখন একটা চ্যাম্পিয়ন দলের কাছে আসতে পেরেছি, সেটা নিশ্চয় আমাকে গর্বিত করছে। একই সঙ্গে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।”
বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থা দিনকে দিন নিচের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু নতুন সভাপতি চান ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে, “আমরা আগামী চার বছর ফুটবলটা এগিয়ে নিতে চাই কারও একজনের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে। কেউ অসুস্থ থাকতে পারে, কেউ ট্র্যাভেলে থাকতে পারে। অন্য কেউ তার বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে, কাজ এগিয়ে নিবে।”
নতুন সভাপতি সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “আমার সহযাত্রীদের ব্যাপারে এখনও আমার বলার যোগ্যতা নেই। ডেলিগেটেদের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়। বরং তাদের প্রশ্ন করা উচিত, তারা আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা, আমি নেতৃত্বের জন্য যোগ্য কিনা। এখানে অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিরা আছেন, ফেডারেশনের বাইরে আমার চেয়ে অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড় আছেন, আমার চেয়ে অনেক যোগ্য সংগঠক আছেন। আমার চেয়ে অনেক বড় ব্যবসায়ী আছেন এবং আমার চেয়ে অনেক বড় কর্পোরেট হাউজের প্রতিনিধি আছেন। আমি নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করি তাদের প্রতি, কারণ তারা আমাকে নেতৃত্বের জায়গাটা দিতে রাজি হয়েছেন।”
শেষের কথাতেই তরুণ সভাপতি নিজেকে আলাদা করেছেন। সতীর্থদের মন জিতে নিয়েছেন। সঙ্গে আগের সংস্কৃতি ভুলে তিনি বাফুফে সভাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আগে কাজী সালাউদ্দিন কারো সঙ্গে আলাপ না করে নিজের মতো ঘোষণা করে দিতেন। এখন সভায় আলোচনার পরই ফুটবলীয় সিদ্ধান্তগুলো হবে।