তার সঙ্গে কোনও দলবল নেই। তাবিথ আউয়াল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) হোটেলে আসেন একাই এবং বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে তরফদার রুহল আমিন ঢাকার এক হোটেলে সদলবলে গিয়ে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাহলে আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে দ্বিমুখী লড়াইয়ের প্লট দাঁড়িয়ে গেল। এখনও অবশ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণার পর থেকে হাওয়ায় ভাসছিল তাবিথ আউয়ালের নাম। ওই গুঞ্জনকে সত্যি করে বাফুফের এই সাবেক সহ-সভাপতি সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন, “আমি চতুর্থবারের মতো বাফুফের নির্বাচনে অংশ নেবো। আমি সভাপতি পদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের প্রার্থীতার কথা জানাচ্ছি। আমি আশাবাদী, সভাপতি পদে লড়াই করলে আমি জিতব এবং জিতলে দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে পারব। আমি আজ আমার ইচ্ছেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলাম।”
তিনি ২০১২ সাল থেকে দু-দুবার নির্বাচিত হয়েছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি পদে। মজাটা হলো, সালাউদ্দিনের প্যানেলের বাইরে তখনও তিনি একা ছিলেন। এবারও এসেছেন একা। ওই প্রসঙ্গ টেনে তাবিথ বলেছেন, “আমি কখনও কোনও প্যানেলে ছিলাম না, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। ২০১২ সালে সবার সহযোগিতা নিয়ে প্রথমবারের মতো সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। এরপর ২০১৬ নির্বাচনেও সহ-সভাপতি হই। তবে ২০২০ সালে তৃতীয় মেয়াদে পাস করতে পারিনি। তাই বলে আমি কখনও ফুটবল ছেড়ে যাইনি।”
সঙ্গে যোগ করেছেন, “একটা সময় ফুটবল খেলেছি। ব্যক্তিগতভাবে নিজে দুটি ক্লাব চালাই (নোফেল ও ফেনী সকার)। এগুলোর সঙ্গে আমি নিজেকে জড়িত রেখেছি। এর বাইরেও খেলোয়াড় এবং খেলা সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি সবসময়। আমার চিন্তাই ছিল এই ক্রীড়াঙ্গন থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে নেবো না। সরে যেতে পারবও না। কারণ স্পোর্টসটা আমার আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে। মূলত আমি ফুটবলের মানুষ।”
নির্বাচন হেরে গত চার বছর বাফুফের বাইরে থাকা তাবিথ আবার ফিরতে চান। ফুটবলকে নেতৃত্ব দেওয়ার এটাই যথার্থ সময় মনে করছেন ৪৫ বছর বয়সী এই সংগঠক, “আমার মনে হচ্ছে, এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময়। ফুটবলের সব শেষ হয়ে গেছে কিনা বিতর্কে যাব না। ফুটবলকে পরের ধাপে নেওয়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মতো তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ চিন্তা-চেতনা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। আমার যে বয়স, আর কিছুদিন পর হলে আমিও আর তরুণ থাকব না। ওই জায়গা থেকে মনে করি, দায়িত্ব নেওয়ার সময় হয়েছে।”
ক্রীড়াঙ্গন তাকে চেনে বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে। এছাড়াও তার আছে রাজনৈতিক পরিচয়। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তিনি। নিজেও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
এসব প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, “আমার তো অনেকগুলো পরিচয় আছে। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন আছি। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দুবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে লড়েছিলাম- ২০১৫ ও ২০২০ সালে। একই সঙ্গে আমি ২০১২ সাল থেকে বাফুফের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলাম। আপনি কখনও দেখতে পাবেন না আমি নিজের রাজনীতি ও ক্রীড়ানীতিকে মিলিয়ে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছি।”
তাবিথ আউয়াল বিএনপির রাজনীতি করলেও তার সঙ্গে সোমবার সেই ধারার কোনও রাজনীতিবিদকে দেখা যায়নি। অন্যদিকে তরফদার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের প্রার্থীতা ঘোষণার দিন এই সংগঠকের সঙ্গী হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক। এই প্রসঙ্গ তুলতেই তাবিথ আউয়ালের জবাব, “আমিনুল হক সাহেবকে যদি আমার মতো একটা দলের গণ্ডিতে বন্দি করে রাখেন সেটা শোভনীয় হবে না। তিনি ফুটবল অঙ্গনের একজন ব্যক্তি। তিনি সাফজয়ী দলের একজন সদস্য ও সাবেক অধিনায়কও। এখন কে কোন পরিচয় দিয়ে কাকে সমর্থন দিচ্ছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমি বলতে চাই, আমি একজন সাবেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক পরিচয় দিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি।”
এই নির্বাচনী ময়দানকে তাবিথ আউয়াল দেখছেন খেলার মাঠ হিসেবেই। যেখানে জাত, দল ও ধর্মের পরিচয় তার কাছে মুখ্য নয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে তিনি সেরাদের বেরিয়ে আসার প্রত্যাশা করছেন, “আমরা যারা ফুটবল খেলেছি, ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ, তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভালোবাসে। যারা নিজেদের নির্বাচনের যোগ্য মনে করবে, তারা নির্বাচন করবে। তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই ভালো নেতা তৈরি হতে পারে বলে আমি মনে করি। একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে সেরারা উঠে আসুক এটাই আমার চাওয়া।”
সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে তাবিথকে বেশ আত্মবিশ্বাসীই দেখিয়েছে। বাফুফের অন্যান্য পদে কারা তার সঙ্গী হবেন, সেটা সামনে পরিষ্কার করবেন বলে জানিয়েছেন। আপাতত নিজেকে বাফুফের সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েই নতুন লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন তাবিথ আউয়াল।