স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আইন পরিবর্তন করার কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তার মতে, বর্তমানে আইনটা এমনভাবে করা আছে যে ভোট দলীয় প্রতীকে হতে পারে আবার নির্দলীয় প্রতীকে হতে পারে। আইন পরিবর্তন করার কোনও প্রয়োজন নেই।
শনিবার ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) উদ্যোগে সেগুনবাগিচার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, “ডেমোক্রেসির সুযোগ থাকায় মানুষ এ নিয়ে বিতর্ক করতে পারছে। বিতর্ক থাকবে না এটা ঠিক না। আমি দলীয় প্রতীক কিংবা দলীয় প্রতীকবিহীন, কোনওটারই পক্ষে বিপক্ষে নই।”
স্থানীয় সরকারের আইন সংশোধন করে ২০১৫ সালে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনও আইন অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। আইন পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বিলোপ পাবে।
দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা মোট ৪৪টি। চলতি বছরে ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়নি। এ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বড় সমস্যা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোতে মূল সমস্যা বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। তাই রাজনৈতিক শিষ্টাচারে পরিবর্তন আনার দিকেই গুরুত্ব দেন তারা।
জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে এমন কোনও লিগ্যাল ফ্রেম (আইনী কাঠামো) নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তার মতে, “আমাদের সময় এসেছে ভাবার এগুলো একিভূত করা যায় কি না।”
লোকাল গভর্মেন্ট সার্ভিস সিস্টেম (সেবা ব্যবস্থাপনা) অর্থাৎ কর্মচারীদের একসঙ্গে আনার পরামর্শ দিয়ে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, “অর্ধেকের বেশি পৌরসভা তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না।”
দেশের সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যদি আমরা মাদার ল করি- অবশ্যই এখানে মার্কা থাকবে। একক তফসিলে একই দিনে ভোট করা সম্ভব। তাতে নির্বাচনের খরচও কমবে।”
বেশিরভাগ মানুষ প্রতীকের বিরুদ্ধে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি এককভাবে প্রতীকের পক্ষে। যারা ইলেকশন করে তারা নির্দলীয় মানুষ না। দুনিয়ার সব দল স্থানীয় সরকারের মানুষের পরামর্শ নেয়। আমাদের দলগুলোর স্থানীয় সরকার উইং নেই।”
দেশের রাজনীতি দুর্বৃত্তরা দখল করে নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “সমস্যা প্রতীকে নয়, সমস্যা আসলে পার্টিতে। মার্কা উঠিয়ে দিলে ভালো নির্বাচন হবে তার নিশ্চয়তা নেই। মার্কা থাকলে খারাপ হবে তাও ঠিক না।”
উপজেলা স্বতন্ত্র ইউনিট হবে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল( অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “পুরো নির্বাচনব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। একটা দলের সুবিধা অসুবিধার জন্য প্রতীক আনা হয়েছে। প্রতীকের কোনও প্রয়োজন নাই। আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকুক।”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা ও জনগণের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।”
স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন।