কথা বলছিলেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কিন্তু মাঝে-মাঝেই তাকে হাত নাড়তে হচ্ছিল মশা তাড়ানোর জন্য। পাশে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আরও বেশি ব্যস্ত ছিলেন মশা তাড়াতে।
তারা দুজনই বুধবার গিয়েছিলেন ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের রাজউক খাল পরিষ্কার কাজ উদ্বোধন করতে। কাজ উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তারা।
তার একটি ভিডিওতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল এবং মেয়র আতিককে মশার উৎপাতে নাকাল হতে দেখা যায়। এই ভিডিও মন্ত্রীর ফেইসবুকেও দিয়েছেন।
এই অনুষ্ঠানে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, মন্ত্রী-মেয়রদের সামনে মশা উড়ছে। তারাসহ অন্যরা হাত দিয়ে মশা তাড়াচ্ছেন। কথা বলার সময় মশার দংশনে হাত দিয়ে চুলকে নিচ্ছিলেন মন্ত্রী।
সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে একজন সাংবাদিক তাকে বলেন, “আজকে আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন মশার কী অবস্থা, আপনারাই বসতে পারছেন না। চিন্তা করে দেখেন, মশা নিয়ে ঢাকার মানুষ কত দুর্ভোগের মধ্যে আছে। মশাকে কী আপনার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হয় না?”
এর উত্তরে মন্ত্রী তাজুল বলেন, “আমরা সবাই এইডিস নিয়ে বেশি আতঙ্কিত। কারণ, এইডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা মারা যান। সে ক্ষেত্রে বছরের প্রথম থেকে এ নিয়ে বলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি নিয়ে তিনি সতর্ক।”
এইডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রাজধানীবাসীর জন্য প্রতি বছরই আতঙ্ক হয়ে দেখা দিচ্ছে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব হিসাব ছাপিয়ে যায়। গত ২৩ বছরে যেখানে মারা যান ১ হাজারের কম রোগী, সেখানে ২০২৩ সালে মৃত্যু ১৬০০ ছাড়িয়ে যায়।
এই বছর ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য মশা নিধনে জোর দিতে অনুরোধ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী তাজুল বলেন, “সিটি করপোরেশন মশা নিধনের চেষ্টা করবে জনগণের সহযোগিতা নিয়ে। নিধন যতটুকু করতে পারবে করবে। তারপরও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।”
এক খালের দায়িত্বে দুই সরকারি দপ্তর, বিরক্ত মেয়র
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানতেন উত্তরার খালটি রাজউকের। কিন্তু সকালে মন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, এর মালিকানায় ঢাকা ওয়াসাও আছে।
তাতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে আতিক সাংবাদিকদের বলেন, “আমি অনেকবার বলেছি, খালটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করে দেয়ার জন্য। কিন্তু এখনও খালটি হস্তান্তর করা হয়নি।”
এই এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটালেও খালের কচুরিপানা থেকে প্রচুর মশা জন্মায় বলে দাবি করেন তিনি। তাই এখতিয়ারে না হলেও খাল পরিস্কার করতে এসেছেন বলে তিনি জানান।
মেয়র বলেন, “খালটি আমাদের হস্তান্তর করলে পরিষ্কার করে এখানে একটি নান্দনিক জায়গা করে দেব। এখানে ওয়াটার বোট চলবে। মাছের চাষও সম্ভব হবে।
“কিন্তু তার জন্য অবশ্যই পয়ঃবর্জ্যের ব্ল্যাক ওয়াটার (দূষিত পানি) খালে আসা বন্ধ করতে হবে। ওয়াসা ও রাজউককে এগিয়ে আসতে হবে। সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।”