নিজের সঙ্গে কোনোরকম জোরজবরদস্তি ছাড়াই আবেগে ভেসে যাওয়া ঠেকাতে পারেন কি? উত্তর হ্যা হলে, এতে লাভ আপনারই। কারণ তাতে সম্পর্ক থাকবে ভালো; আর যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আপনি থাকবেন সাবলীল।
অনুভূতি উপলব্ধি ও প্রকাশ করার অভিজ্ঞতা জীবনে খুবই জরুরি।
কোন পরিস্থিতিতে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, কেমন আচরণ করবেন তা আবেগ থেকেই ঘটে যায়। তাই নিজের অনুভূতিকে বুঝে চললে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। সবার সঙ্গে আপনার যোগাযোগও চমৎকার হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে টারজানা প্রতিষ্ঠানের একজন থেরাপিস্ট ভিকি বটনিক।
তার চোখে উত্তেজনা অথবা আনন্দের মতো অনুভূতি সব সময় সুন্দর। তবে এরপরই সতর্ক করে হেলথলাইনের কাছে এই থেরাপিস্ট বলেন, এসব অনুভূতি মাঝে মাঝে চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যা সামলে নেওয়া অনেকের জন্যই মুশকিল হয়ে ওঠে।
এই আবেগ সামলে নিজেকে ভালো রাখতে তাই ১০ উপায় বাতলে দিয়েছেন ভিকি বটনিক।
আবেগের পরিণতিতে নজর দিন
মনে রাখতে হবে, তীব্র অনুভূতিবোধ থাকা একেবারেই খারাপ নয়।
“অনুভূতিই আমাদের জীবনকে ছন্দময় রাখে, দুর্দান্ত করে তোলে”, বললেন বটনিক।
“গভীর আবেগ থাকার অর্থ হচ্ছে, আপনি জীবনকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন যে কোনো লুকোছাপা করছেন না তা প্রকাশে।”
দারুণ কিছু ঘটে গেলে, ভয়ানক কোনো খবর শুনে, কিছু হারিয়ে গেলে – এমন অনেক পরিস্থিতিতে আবেগে ভেসে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক আচরণ।
আবেগ কখন তাহলে কাবু করে ফেলে আপনাকে?
বন্ধুত্বে ফাটল ধরছে, কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারও সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না, ক্ষেপে গিয়ে শারীরিক-মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন অর্থ্যাৎ প্রতিদিন নিজের মধ্যে ছন্দ পতন ঘটতে থাকলে বুঝতে হবে আবেগে একটু লাগাম দিতে হবে এবার।
আবেগের দমন নয়, একটু নিয়ন্ত্রণ
চাইলেই আবেগ সামলে নেবেন বিষয়টা এতোটাও সহজ নয়। আবেগ মনের গোপনে চেপে রাখা যাবে না। আবার সব সময় আবেগে ভেসে যাওয়াও যাবে না।
আবেগ দমন করা মানে নিজের মনের দরজা-জানালা বন্ধ করে ফেলা। এতে বরং অস্থিরতা, বিষন্নতা, ঘুমের ব্যাঘাত, পেশী ব্যথা বাড়বে।
মনে রাখতে হবে আবেগ সামলানোর অর্থ হচ্ছে, নিজের মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখা।
নিজের মনকে বুঝুন
আপনার প্রবল আগ্রহ থাকার পরও কোনো ঘটনা বা কারও আচরণ আপনার প্রত্যাশা মতো হলো না দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ফোন ছুড়ে মারার আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করে নিন।
আপনি কি আশাহত হয়েছেন? আপনি কি দ্বিধায় ভুগছেন? আপনার কী রাগ হচ্ছে খুব?
কেনই বা আপনার মনে এসব অনুভূতি দানা বাঁধছে? কেউ কি আপনাকে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই এড়িয়ে যাচ্ছে?
মাঝে মাঝে বিকল্প ব্যাখ্যা নিয়েও ভেবে দেখুন।
অন্য দিকে থাকা ব্যক্তি নিজে কোনো বিপদে থাকার কারণে আপনাকে সময় দিতে পারছে না – এভাবে ভেবে দেখলে মানসিক ভাবে আরাম বোধ করছেন কি?
ধীরে ধীরে নিজের সঙ্গে এই চর্চা চালিয়ে যান। এতে করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতিতে কম পড়তে হবে।
সব অনুভূতিই দারুণ
যদি সব সময়ই নিজের অনুভূতি বশে রাখার মতো দক্ষ হয়ে ওঠেন, তাহলে আপনি নিজের অনুভূতিতে আলো-হাওয়া পৌঁছাতে দিচ্ছেন না।
যদি চাবি খুঁজে না পেয়ে হাতপা ছুড়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন – তাহলে হয়তো নিজেকে একবার বলতেই পারেন, “শান্ত হও”, অথবা “পাগলামি করো না, এ খুব বড় কোনো সমস্যা নয়।”
কিন্তু তাতে আবার নিজের অনুভূতিকে জানা ও বোঝার অভিজ্ঞতায় বাধা পড়বে; আর তা হবে আপনার জন্য বড় সমস্যা।
নিজের অনুভূতিকে স্বাগত জানিয়ে নিজের সঙ্গে সহজ হওয়ার পথ খুলে যাবে। তাতে কোন ঘটনা আপনাকে উত্তেজিত করে, কোন ঘটনা কাঁদায়-হাসায় কিংবা অপ্রস্তুত করে – এসব নিয়ে খুব ভালো ধারণা হবে আপনার।
অনেক গবেষণাও দাবি করে, নিজের অনুভূতি-আবেগকে স্বাগত জানালে জীবনে স্বস্তি বজায় থাকে এবং মানসিক সমস্যার মুখে পড়তে হয় না। সুখী মানুষ হওয়ার মূলমন্ত্রই হলো অনুভূতিকে সহজভাবে নিতে শেখা।
অনুভূতির ডায়েরি
কখন রাগ হয় অথবা কখন বেদনা তা নোটবুকে টুকে রাখতে পারেন তারিখ-সময় দিয়ে। ল্যাপটপেও নির্দিষ্ট ফাইল খুলে টাইপ করে রাখা যায়। নিজের আবেগ নিয়ে নিজের লেখা পড়ার সময় পুরো ঘটনা, আচরণ, প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট ধরা দেবে আপনার চোখে।
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিজেকে শান্ত রাখতে কাজে দেয়। যদি রাগে-দুঃখে বাকহারা হয়ে পড়েন তখন এই পদ্ধতিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সহজ করে তুলতে পারবেন।
মানসিক শান্তির জন্য যোগাসনের এই মন্ত্র খুব কাজের।
নিজেকে প্রকাশের সঠিক সময়
অনেক সময় সবার সামনে আবেগের চরম বহিঃপ্রকাশ না করে নিজের ঘরে বালিশে ঘুষি মেরে রাগ, বালিশে মুখ ডুবিয়ে কেঁদে দুঃখ হালকা করা যায়।
নিজেকে সময় দেওয়া
বটনিকের পরমর্শ হচ্ছে, অতিরিক্ত আবেগ তাড়িত করে এমন পরিস্থিতি থেকে মাঝে মাঝে নিজেকে খানিক সরিয়ে রাখার চর্চা করতে হবে।
অনুভূতিকে বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাবে না মোটেও; তবে মন হালকা রাখতে, মনোযোগ সরাতে মাঝে মাঝে হেঁটে আসুন, হাসির ভিডিও দেখুন, প্রিয়জনের সঙ্গে গল্প করুন, পোষা প্রাণির সঙ্গে সময় কাটান।
চাপমুক্ত থাকুন
অনেক কাজের চাপে থাকলে নিজের আবেগের বাড়াবাড়ি ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই বিপদের সময়, অফিসের কাজে নিজের উপর অতিরিক্ত চাপ হয়ে গেলে সেদিকে নজর দিতে হবে সবার আগে।
মেডিটেশন করে মানসিক ও শারীরিক চাপ সহজ করে মনোযোগ বাড়ানো যায়। এছাড়া ভালো ঘুম, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়ে মন ভালো রাখা যায়।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন
যদি ঘন ঘন মুড সুইং দেখা দেয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাঘাত ঘটছে। মুড সুইং সমস্যায় অনেকে নিজের জন্য ক্ষতিকর চিন্তাও করে থাকেন। তাই শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে কোনো ট্রমা, পারিবারিক সমস্যা শারীরিক-মানসিক ভাবে ভোগাচ্ছে কি না তাও একজন নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে দেখতে হবে।