Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পঞ্চপাণ্ডবের বিদায় মাঠ থেকে নয় কেন

পঞ্চপাণ্ডব সাকিব, মাশরাফি,মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম। ছবি : সংগৃহীত
পঞ্চপাণ্ডব সাকিব, মাশরাফি,মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম। ছবি : সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

বিদায়ের বেহাগ বাজবে। আবেগপ্লুত থাকবেন অবসর নিতে যাওয়া ক্রিকেটার। দর্শকরা অভিনন্দন জানাবেন মাঠের বাইরে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে এটাই রীতি।

ডন ব্র্যাডম্যান শেষ ইনিংসে ৪ রান করলে টেস্টে তার গড় হতো ১০০। কিন্তু বিদায়ী টেস্টে এই কিংবদন্তি এরিক হলিসের বলে বোল্ড হন শূন্য রানে। বলা হয়, শেষ ম্যাচের জন্য আবেগি হয়ে পড়ায় চোখ ভিজে উঠেছিল ব্র্যাডম্যানের। এজন্যই দেখতে পাননি বলটা।

ইমরান খান বিদায় নিয়েছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে। হালের বিরাট কোহলির মতো তারকাও টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন বিশ্বকাপ জিতে, মাঠ থেকে সতীর্থদের কাঁধে চেপে।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সেই সৌভাগ্য হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের অন্যতম সফল খেলোয়াড় ধরা হয় পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে খ্যাত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে। এই পাঁচজনেরই বিদায়টা হয়েছে অভিমান নিয়ে আর আকস্মিকভাবে। তাতে বেদনাহতই হয়েছেন সমর্থকরা।

সবশেষ সাকিব আল হাসান টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের কানপুরের সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই ক্রিকেটারের অবসরটা ধোঁয়াশায় ঘেরা। তিনি চান শেষ টেস্টটা মিরপুরে খেলতে। কিন্তু হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সাকিব দেশে এলে তার নিরাপত্তা দিতে না পারার কথা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।

তাই দেশের মানুষের সামনে মাঠ থেকে রাজকীয় বিদায় বলার ইচ্ছেটা পূরণ নাও হতে পারে এই কিংবদন্তির।

কানপুর নাকি মিরপুর-কোথায় বিদায়ী টেস্ট খেলবেন সাকিব?

শুধু সাকিব নয়, বাকি চার পাণ্ডবের কারও বিদায়টাই (কোনও এক ফরম্যাট থেকে) সেই অর্থে সম্মানের হয়নি। দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।

মাশরাফি বিন মর্তুজা

বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক বলা হয় মাশরাফিকে। সেই মাশরাফি ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় প্রথম টি-টোয়োন্টির আগে হঠাৎ জানিয়ে দেন, এই ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা। তখনকার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাকে দলে চাইছিলেন না, এমন গুঞ্জন ছিল ক্রিকেটাঙ্গনে। সেটা বুঝেই হয়ত আকস্মিকভাবে সরে দাঁড়ান মাশরাফি।

২০২০ সালের মার্চে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডের আগে মাশরাফি ঘোষণা দেন এই ফরম্যাটেরও নেতৃত্ব ছাড়ার। ম্যাচের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ হবে অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। তবে খেলোয়াড় হিসেবে আমি জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করব। আমি আজ সকালে সিদ্ধান্তটি নিয়েছি।’’

অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচের দিনে মাশরাফি, তবে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেননি এখনও।

মানে এমন সিদ্ধান্তও আবেগ থেকে নেওয়া। তিনি খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে চাইলেও সুযোগ পাননি আর। মাঠ থেকে তাই অবসরও নেওয়া হয়নি মাশরাফির। অথচ তার বয়স এখন ৪১ বছর ছুঁই ছুঁই।

তামিম ইকবাল

ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে অনেক ক্রিকেটারই তিন ফরম্যাটের কোনও একটি থেকে সরে দাঁড়ান। তামিম ইকবালও চাইছিলেন সেটা। তাই ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তামিম জানান ছয় মাস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেলার কথা।

এই ছুটির মাঝে সে বছরের জুলাইয়ে ফেইসবুকে টি-টোয়েন্টি ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তামিম লিখেছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজকে থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।” এরপর বিদায়ের কয়েকটি ইমোজি ব্যবহার করেন তিনি।

আবেগে অবসর নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।

বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই ওপেনারের তাই মাঠ থেকে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলা হয়নি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আবার অভিমানে নাটকীয়ভাবে অবসর নিয়ে ফেলেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে। চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতভাগ ফিট না হয়েও তামিম খেলার ঘোষণা দিলে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও তখনকার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

এই অভিমানে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত নেন ফেরার, তবে ছেড়ে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব। সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরের ওয়ানডেতে খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংসও। তারপরও নাটকীয়ভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ হয়নি তামিমের।

এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে তামিম।

মুশফিকুর রহিম

২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে অন্য দুই সংস্করণ টেস্ট ও ওয়ানডেতে মনোযোগ দেওয়ার জন্যই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

অভিমানে টি-টোয়েন্টি ছাড়ার কথা নিজেই স্বীকার করেছেন মুশফিক।

গত বিপিএলে মুশফিক ‘বোমা’ ফাটিয়ে বলেন, বাধ্য হয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার কথা! রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলেন, ‘‘আমি শুধু একটা প্রশ্ন করি, আমি কি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছি নিজের ইচ্ছায়? এতটুকু শুধু বলার আছে। যখন অবসর নিয়েছিলাম, তার আগের এক মাস একটু দেখে নিয়েন। আর কিছু বলার নেই।’’

মাহমুদউল্লাহ

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলে এই ফরম্যাট থেকে বাদ পরেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় ১৭ মাস পর ফিরেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে। বিসিবির সঙ্গে আলোচনা না করে হারারে টেস্টের মাঝখানেই ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই ফরম্যাটে আর খেলবেন না তিনি!

হারারে টেস্টে ১৫০* রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও হারারে টেস্টেই সতীর্থরা বিদায়ী গার্ড অব অনার দেন তাকে। কিন্তু টেস্টের মাঝপথে একজন খেলোয়াড়ের ড্রেসিংরুমে অবসরের ঘোষণা কতটা ক্রিকেটীয় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তখনকার বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। দীর্ঘদিন টেস্টে না নেওয়ার বঞ্চনার জবাবে কি পারফর্ম করেই অবসর মাহমুদউল্লাহর, এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

মাহমুদউল্লাহকে গার্ড অব অনার দিচ্ছেন সতীর্থরা।

মাহমুদউল্লাহ অবশ্য চুপ ছিলেন এ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত চার মাস পর বিসিবির পাঠানো এক বিবৃতিতে মাহমুদউল্লাহ নিশ্চিত করেন অবসরের কথা, ‘‘এত বছর পর ক্রিকেটের কোনো সংস্করণকে বিদায় বলাটা সহজ নয়। আমি সব সময়ই মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলার উপযুক্ত সময় আমার জন্য এটিই।’’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই মান-অভিমানে অবসরের যে সংস্কৃতি, তার বদল কবে হবে; সেটাই এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাবনার বিষয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত