ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচের ঘটনাকে ফিক্সিং সন্দেহ করেছে বিসিবি। তা নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে বোর্ডের অ্যান্টি করাপশন ইউনিট। তবে ওই ঘটনার স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও ক্রিকেটারদের নিয়ে অ্যাকাডেমি মাঠে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করান অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সদস্যরা।
সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এই ঘটনার বিস্তারিত এসেছে। তা দেখে আগেই একটি সাক্ষাৎকারে এই কাণ্ডের সমালোচনা করেছেন সাকিব আল হাসান। এবার তামিম ইকবাল ক্রিকেটারদের নিয়ে একত্রিত হয়ে এর সমালোচনা করলেন। জানিয়েছেন এমন কিছু করা ক্রিকেটারদের অপমান করার মতোই।
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুরের ম্যাচে হওয়া দুটি আউট ফিক্সিংয়ের সন্দেহ তৈরি করে। ম্যাচের পরদিন ১০ এপ্রিল তদন্তের অংশ হিসেবে মিরপুরে ডাকা হয় শাইনপুকুরের দুই ক্রিকেটার রহিম আহমেদ ও মিনহাজুল আবেদীন সাব্বিরকে।
এই দুজন স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে উপস্থিত হয়ে বিসিবি কর্মকর্তাদের সামনে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ের সেই ঘটনা পুনরায় মঞ্চায়ন করে দেখান। উইকেটের দুই পাশে দুটি ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করা হয়। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া কর্মীরাও।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম মনে করেন মিডিয়ার সামনে এই দুই ক্রিকেটারেকে দিয়ে অভিনয় করানোর কোনো অধিকার নেই কারো। এই বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটাররা খুশি ছিলেন না। শুক্রবার তাওহীদ হৃদয়ের শাস্তির ব্যাপারটির সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়েও বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে তামিমসহ বাকি ক্রিকেটারদের।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তামিম বলেছেন, “কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন গুলশান আর শাইপুকুরের ম্যাচে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা বোর্ডকে খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে দেখুন যদি সেখানে কোনো দুর্নীতি হয় বা কোনো ক্রিকেটার কোনো ভুল কিছু করলে আমরা সবাই চাই শাস্তি হোক। আমরা শতভাগ এটার সঙ্গে একমত। কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নেই এই দুটো ছেলেকে নিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন। এটা বিশ্বে এন্টি করাপশন বা কোনো জায়গায় এমন নিয়ম নেই এই দুটো ছেলেকে বেইজ্জত করবেন মিডিয়ার সামনে একই জিনিস করিয়ে। এটা ক্রিকেটারদের প্রতি অপমান। আমরা এটা নিয়ে এক ফোটাও হ্যাপি ছিলাম না।”
এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) ফিক্সিং নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। বেশ কয়েকটি দলের কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করে। সেখানে বিসিবির সূত্র দিয়ে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকা বিভিন্ন ক্রিকেটারের নাম জুড়ে দেয়া হয়।
যদিও পূর্ণ তদন্তের আগে কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই। এমন সংবাদের কারণে অনেক ক্রিকেটারই বিব্রত হয়েছেন। এর মধ্যে এনামুল হক বিজয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পোস্ট করে সবাইকে এই বিষয়ে খোলাসা করেছিলেন।
এই বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি সভাপতির সভায়। তামিম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা দোষী হলে তাদের শাস্তি চান তারা। তবে এর মধ্যে অনেকে দোষী নাও হতে পারেন। তাই কোনো তদন্তের আগে ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ অপমানজনক উল্লেখ্য করেছেন তামিম।
তিনি যোগ করেন, “এর আগে বিপিএলেও একই জিনিস। দশজনের নাম লিক হয়েছে। বিসিবি থেকে দশজনের ছবি দিয়েছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। ওইখান থেকে যদি কোনো ক্রিকেটার দোষী হয় তাহলে আমরা সব ক্রিকেটার চাই তার শাস্তি হোক। যতটুকু শাস্তি সম্ভব দেয়া হোক। যদি ওইখান থেক দুজন নির্দোষ বা আটজন নির্দোষ, নামগুলো লিক করে দেয়া পাবলিকলি এটা ক্রিকেটারদের জন্য অপমানজনক। এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। ক্রিকেটারদের এভাবে ট্রিট করতে থাকলে ভালো কিছু হবে না।”
ক্রিকেটারদের তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুক্রবার সকালে তামিম ইকবালের ডাকে জড়ো হন প্রিমিয়ার লিগে খেলা সকল ক্রিকেটাররা। গুঞ্জন উঠেছিল সবাই লিগ বয়কট করবেন। কিন্তু বোর্ড সভাপতি দুপুরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করতে বিসিবিতে আসার পর আলোচনা শেষে বক্তব্যে নিজেদের কথা জানিয়েছেন তামিম।