সাইকেল চালিয়ে এভারেস্ট বেসক্যাম্পের চূড়ায় উঠে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন তাম্মাত বিল খয়ের। এর আগে বাংলাদেশের অনেকে এভারেস্ট বেসক্যাম্প জয় করলেও সাইকেলে চড়ে এই প্রথম কেউ এটিতে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ালেন।
অনন্য এই কৃতিত্বের জন্য শনিবার চট্টগ্রামের হালিশহর বিডিআর মাঠে ২৭ বছর বয়সী তাম্মাতকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যার আয়োজক ছিল স্থানীয় সংগঠন স্কুল অলটারনেটিভ, সমগ্র বাংলাদেশ ও কবুল ইভেন্টস।
‘আমরাও পারি’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠান শুরু হয় নগরীর সিআরবি মোড় থেকে সাইকেল র্যালি দিয়ে, যাতে অংশ নেন ৩০০শোর বেশি সাইক্লিস্ট।
টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও নয়াবাজার হয়ে হালিশহর বিডিআর মাঠে র্যালিটি শেষ হয়। র্যালি শেষে তাম্মাতকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভারেস্ট বেসক্যাম্প অভিযান সম্পর্কে তাম্মাত বলেন, “নেপালের কাঠমান্ডু থেকে সাইকেলে চড়ে বেসক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দিই গত ২৯ অক্টোবর।
“এরপর ৫ নভেম্বর ৮ম দিনে ৪ হাজার মিটার উচ্চতার পিকে পিক নামের পর্বতের চূড়ায় উঠি। ২০তম দিনে ৫ হাজার ৫৪৬ মিটার উচ্চতার চুখুং রি পর্বত ও পরদিন কংমা লা পাস অতিক্রম করি। ২০ নভেম্বর দেশের প্রথম সাইক্লিস্ট হিসেবে এভারেস্টের বেসক্যাম্পে পৌঁছাই।”
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে তাম্মাত। গোপালগঞ্জে জন্ম হলেও বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম শহরে বেড়ে ওঠা তার। সাইক্লিং শুরু ২০১৬ সালে।
পরের বছর ৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের ৬৪ জেলা ২৫ দিনে সাইকেলে ভ্রমণ করে আগের ২৯ দিনের রেকর্ড ভাঙেন তাম্মাত। ২০১৮ পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ১০০১ কিলোমিটার ভ্রমণ করেন ২৪ দিনে।
এছাড়া ২০১৯ সালে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভাঙেন এই তরুণ। সাইকেলে ১৫ দিনে পাড়ি দেন দেশের ৬৪টি জেলা। সর্বশেষ ২০২২ সালে আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় পৌঁছান ৯ দিনে।
দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও সাইকেল চালান তাম্মাত। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের ইস্ট ওয়েস্ট হাইওয়ে অভিযান সম্পূর্ণ করেন তিনি।
এছাড়া ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটারের অভিযানও সফলভাবে সম্পন্ন করেন এই সাইক্লিস্ট।
এভারেস্ট বেসক্যাম্প জয়ে সংবর্ধনা পেয়ে তাম্মাত বলেন, “আমার এই বিজয় কেবল আমার নয়, পুরো বাংলাদেশের। আমি চাই, আমার অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক স্কুল অলটারনেটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহিদুল আলম বরাত বলেন, “তাম্মাত দেখিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দিয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব। তার এই অর্জন আমাদের যুবসমাজের জন্য অনন্য উদাহরণ।”
সমগ্র বাংলাদেশের সিইও মাহিদুল ইসলাম নকীব বলেন, “ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভ্রমণ নিয়ে কাজ করে আমাদের সংগঠন। তাম্মাতের মতো এমন ইতিহাস সৃষ্টিকারী তরুণের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, ইচ্ছা থাকলে ‘আমরাও পারি’।”
অনুষ্ঠানের আরেক আয়োজক কবুল ইভেন্টসের প্রধান নির্বাহী মিশকাতুল আজম বলেন, “নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে ও তা বাস্তবায়নে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করা এমন প্রতিভাবানদের কাজ তুলে ধরা আমাদের লক্ষ্য। ‘আমরাও পারি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চেয়েছি, বাংলাদেশি তরুণদের পক্ষে সবই সম্ভব।”