Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে বাধা আর থাকল না

তারেক রহমান।
তারেক রহমান।
[publishpress_authors_box]

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনও ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাইকোর্ট।

ফলে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপির এই শীর্ষ নেতার বক্তব্য প্রচারে যে বাধা ছিল তা আর রইল না।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ডিসচার্জড ফর নন প্রসিকিউশন’ বা খারিজের আদেশ দেয়।

পরে বিএনপির আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে হাইকোর্ট বিভাগ যে বাধা দিয়েছিল, সেই আদেশ আদালত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

“এর ফলে টেলিভিশন,পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আইনগতভাবে আর কোনও বাধা থাকল না।”

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এই আইনজীবী বলেন, “দেশে আইনের শাসন কায়েম হচ্ছে। এই নির্দেশের মাধ্যমে তারেক রহমান তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেলেন।”

২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক উল্লেখ করে তারেক রহমানের কোনও বক্তব্য কিংবা বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই মামলার আবেদনকারী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা বৃহস্পতিবার মামলাটি প্রত্যাহারে (নন-প্রসিকিউশন) আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে আদালত।

এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট এক আদেশে হাইকোর্ট ইউটিউব, ফেসবুকসহ সকল সামাজিক প্ল্যাটফর্ম থেকেও তারেক রহমানের বক্তব্য অবিলম্বে ব্লক, অপসারণ বা সরিয়ে ফেলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

সেদিন এ আদেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে বড় রকমের হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করেন দুই বিচারপতি। পরে বন্ধ হয়ে যায় বিচার কাজ।

ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম, সাঈদ আহমেদ রাজা ও সানজিদা খানম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

অন্যদিকে বিএনপির আইনজীবী ছিলেন এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দস কাজল।

হট্টগোলের প্রেক্ষাপট

সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। শুরুতেই সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ইউটিউব, ফেসবুকসহ সকল শোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে তারেক রহমানের বক্তব্য অবিলম্বে ব্লক, অপসারণ বা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দেন।

তার আবেদন দাখিলের সঙ্গে সঙ্গেই আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে।

এতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা হইচই করে উঠেন। তারা আদালতকে বলেন, প্রধান বিচারপতির অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেটা এই আদালতের বিচারকদের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে, আদালতের বিরুদ্ধে নয়। তাই এই আবেদন এই বেঞ্চ শুনতে পারে না।

তখন কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারক খসরুজ্জামান বলেন, ‘এটা আমি দেখব না।’

বিএনপির আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি আদালত নষ্ট করে দিচ্ছেন, বিচার হওয়ার আগেই রায় দিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বিচারব্যবস্থায় নৈরাজ্য সৃষ্টিরও অভিযোগ আনেন আইনবীবীরা।

বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন অভিযোগ করে তার প্রতি অনাস্থার কথা জানান বিএনপির আইনজীবীরা।

একপর্যায়ে বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতির উদ্দেশে বিএনপিপন্থী এক আইনজীবী বলেন, “আমরা না বললে মানুষ ভুল বুঝবে।”

তখন বিচারক বলেন, “আপনাদের সবার বলা শেষ হলে কিছু বলব।”

কিন্তু আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে বিচারক আর কিছু বলতে পারেননি। এরপর ১০টা ৫৫ মিনিটে দুই বিচারপতি এজলাস ছেড়ে চলে যান। এ সময় আইনজীবীদের মধ্য থেকে কেউ একজন কজলিস্ট বা মামলার তালিকা সম্বলিত কাগজ বিচারকদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন।

এরপর প্রথমার্ধে বিচারকেরা আর এজলাসে ওঠেননি। এজন্য পুরো সময় বন্ধ ছিল বিচারকাজ।

তবে দুপুরের বিরতির পর ২টা ৩৫ মিনিটে আবারও তারা এজলাসে আসেন এবং অন্যান্য মামলার শুনানি শুরু হয়। পরে তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।

এর আগে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনার করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়।

আইনের দৃষ্টিতে পলাতক অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনও ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দীর্ঘ দিন পর সেই রুল শুনানির জন্য ফের আবেদন করেন রিটকারি আইনজীবী। তখন প্রশ্ন ওঠে তারেক রহমানের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে কিনা। রুল শুনানি প্রস্তুতির জন্য পরে রিটকারি আইনজীবী নোটিশ ইস্যু করে ফের শুনানি করতে যান।

এ সময় তারা সম্প্রতি তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারনের নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন। যা নিয়েই মুরু হয় হট্টগোল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত