বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব ও কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দেশের মানুষকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেইসঙ্গে কারও উসকানির ফাঁদে না পড়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া বিবৃতিতে এসব কথা বলেন লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অবস্থান করছেন ভারতে। মূলত তাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের এক ধরনের অস্বস্তিকর সম্পর্ক তৈরি হয়।
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হলে তা নিয়ে সরব হয় ভারত। সেইসঙ্গে অধিকার আদায়ে ও নিরাপত্তার খাতিরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হন হিন্দু নাগরিকদের একটি বড় অংশ।
গত ২৫ নভেম্বর সেই জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের পরিস্থিতি। তার মুক্তি চেয়েও দাবি আসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের বেশকিছু স্থানে পদদলিত করা হয় ভারতের পতাকা। চিন্ময় গ্রেপ্তার ও পতাকা পদদলনের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালায় একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা, পোড়ানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও। একই দিন ভারতের আরও কয়েকটি স্থানে চলে বাংলাদেশ বিরোধী বিক্ষোভ।
Since the fall of autocrat Sheikh Hasina, there is an increase of inflammatory media commentary and political rhetoric against Bangladesh coming from certain Indian quarters. There is now an echo chamber filled with misinformation, fuelling persistent anti-Bangladesh sentiment.… pic.twitter.com/YNEtOCy6hE
— Tarique Rahman (@trahmanbnp) December 3, 2024
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষকে ধৈর্য্যধারণের পরামর্শ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আমি আমার বাংলাদেশের নাগরিকদের অনুরোধ করতে চাই, আপনারা সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করুন এবং কারও উসকানিতে উত্তেজিত হবে না।”
সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় একটি মহল দেশটির গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। সেখানে এত বেশি অপতথ্য পরিবেশন করা হয়েছে যে তা বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাবকে ক্রমাগত উসকে দিচ্ছে।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কী পরিমাণ অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে যে তা প্রতিবেশি দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিপুল বিভেদ ও বিরোধ সৃষ্টি করেছে।”
তারেক রহমান বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আন্তর্জাতিক অংশীজনদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) জনসংখ্যার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে অন্য কোনও দেশের লাভ নেই।
“এটা বুঝতে হবে যে, শেখ হাসিনার পতনের কারণ কী, তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কী কী হয়েছে এবং কোনও ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা কেন জরুরি।”
বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “কিন্তু আমরা সবসময়ই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের দেশ ছিলাম এবং থাক। এদেশে জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে।”
নানা সংগঠনের নিন্দা
আগরতলায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার ঘটনায় বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতিও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
সমিতির সভাপতি মো. ইয়াহিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরীর সই করা বিবৃতিতে বলঅ হয়, “বাংলাদেশ মিশনে ভারতের হিন্দু জঙ্গিদের এই হামলা বিরাট উদ্বেগের বিষয়। এটি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বিরাট হুমকি।
“এই হামলার মধ্য দিয়ে ভারতের জঙ্গিরা দুই দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের বিরুদ্ধে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। শুধু আগরতলা নয়, কলকাতা, দিল্লি এবং মুম্বাইসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ বিরোধী উগ্রবাদী তৎপরতা শুরু হয়েছে।”
ভিয়েনা কনভেনশনকে সন্মান জানিয়ে ভারত সরকারকে অবিলম্বে এই বাংলাদেশ বিদ্বেষী তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তা না হলে বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে। তাই দুদেশের সাধারণ জনগণের স্বার্থে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ বিদ্বেষী জঙ্গি তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
বিবৃতিতে আইনজীবী নেতারা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ভারত সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা বাংলাদেশ মিশনে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।