Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে : তারেক

সংসদ ভবনের এলডি হলে বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। সভায় তার ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।
সংসদ ভবনের এলডি হলে বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। সভায় তার ধারণ করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।
[publishpress_authors_box]

অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা সন্দেহবিদ্ধ হওয়ার কথা বললেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন উপদেষ্টার বিভিন্ন রকম বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলবে বলেও সরকারকে সতর্ক করেছেন তিনি।

জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক। তার ধারণকৃত একটি বক্তৃতা সভায় প্রচার করা হয়।

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ধারণ করা বক্তব্যও প্রচার করা হয় এই সভায়। ২০১৬ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর এটা বিএনপির দ্বিতীয় বর্ধিত সভা।

এই সভা যেখানে হয়েছে, সেই সংসদের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে শুক্রবার সমাবেশের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে তারেক বলেন, “মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এখন পর্যন্ত ১৬-১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়।

“তবে দলগুলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং প্রতিটি দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।”

শিক্ষার্থীদের এই দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে বিএনপি নেতারা নানা সন্দেহ করে আসছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর আগে বলেছিলেন, সরকারে থেকে দল গঠন তার দল ও দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

এনিয়ে ফখরুলের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের সমর্থিত জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বাহাস চলার পর অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তবে দুজন অভ্যুত্থানের দুই নেতা এখনও সরকারে রয়েছেন।

তারেক বলেন, “দেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি।

“কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।”

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার যখন এখনও পুরোপুরি সফল হয়নি, তখন সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফলতার পরিচয় দিতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।

“গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হলে তা হবে পলাতক-স্বৈরাচারের দোসরদের সারা দেশে পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা হবে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারেক বলেন, “সারাদেশে গণহত্যাকারীদের দোসর, মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তারেক তার প্রতিটি বক্তব্যেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন। এবারই প্রথম তিনি সরকারের নানা কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

তারেক বলেন, “বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও এ নিয়ে কোনও কোনও উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য-মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে।

“অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনও নিজেদের কর্মপরিকল্পনার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।”

বর্ধিত সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেন, “৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়া পরে মানুষ আশা করেছিল দেশের অবস্থার পরিবর্তন হবে। অতি দ্রুত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে দেখছি, এখনও সেই লক্ষ্যে আমরা সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশনা পাচ্ছি না।”

নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে সরকারকে সর্তক করে তারেক রহমান বলেন, “সুকৌশলে রক্তপিচ্ছিল রাজপথে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে “

সংস্কার দ্রুত শেষ করে সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে সেদিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

“রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনও বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে  জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্যেই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।”

সংস্কার নিয়ে তারেক বলেন, “রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপির কাছে সংস্কারের ধারণা নতুন কিছু নয়। সরকারে কিংবা বিরোধী দলে বিএনপি যখন যে অবস্থানেই দায়িত্ব পালন করেছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব সময়েই রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে এবং করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”

বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে, তাকে ‘বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সনদ’ অভিহিত করে তারেক বলেন, “সময়ের প্রয়োজনে রাষ্ট্র-সরকার-রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য এই ৩১ দফাতেও সংযোজন-বিযোজনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রস্তাবনার খুব বেশি ইস্যুতে মৌলিক বিরোধ নেই।”

দেড় যুগ ধরে দেশের বাইরে থাকা তারেক দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি আপনাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও যোগাযোগ এবং কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে আমি কখনোই আপনাদের কাছ থেকে দূরত্ব অনুভব করিনি।”

বর্তমান সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়ে তারেক বলেন, “আচরণে হতে হবে আরও সতর্ক ও সংযত। যারা দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ হবেন, ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাধ্য হয়েই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনও কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।”

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিএনপি শুধু আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনার ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।”

তারেক বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবে, যেখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান তথা দলমত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে দলের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তারেক বলেন, “বিএনপি মনে করে বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই। একটি দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা, প্রয়োজন ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের নীতি ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত