সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। চার সদস্যের এই টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. জহিরুল হকের সই করা এক পরিপত্রে এই টাস্কফোর্স গঠনের কথা জানানো হয়।
পিবিআইয়ের বর্তমান প্রধান হলেন মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরী। তার সঙ্গে টাস্কফোর্সে আরও যুক্ত হবেন পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি বা এর উপরের পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, একই পদমর্যাদার সিআইডি থেকে একজন এবং র্যাবের পরিচালক বা তার উপরের পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।
পরিপত্রে ১২ বছর আগে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কর্মপরিধি সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
সে অনুযায়ী, টাস্কফোর্স যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণ করে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
কাজের প্রয়োজনে টাস্কফোর্স আরও সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছ থেকে সরিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ঠিক করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এবং সাগর-রুনির মামলার বাদী পক্ষে রয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে শিশু মাহির সরওয়ার মেঘ।
সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর তদন্তের দায়িত্ব যায় র্যাবের কাঁধে। সেই থেকেই র্যাবই হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত করছিল। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১১২ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সারাদেশের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ১১১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।”
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় এক যুগ পর বাদী পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।