Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

তৌফিক-ই-ইলাহী ৪ দিনের রিমান্ডে

ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধরী। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

রিমান্ডে যেতে হচ্ছে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে। তাকে চার দিন থাকতে হবে পুলিশ হেফাজতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় এক ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে।

বুধবার ঢাকার আদালত তৌফিক ইলাহীকে রিমান্ডের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে সুরক্ষা দিয়ে এজলাস থেকে নেওয়ার নির্দেশনাও দেয়।

সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী আদালত প্রাঙ্গণে নিগৃহীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারকের এই নির্দেশনা আসে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও দলটির নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আন্দোলন দমনে সরকারের কঠোর নীতিতে কয়েকশ মানুষ নিহতের ঘটনায় একের পর এক মামলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।

তেমনই একটি মামলায় মঙ্গলবার তৌফিক ইলাহীকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গুলশানের কাছের এলাকা বাড্ডায় গত ১৯ জুলাই নিহত হন সুমন সিকদার নামে এক যুবক।

সরকার পতনের পর গত ২০ আগস্ট তার মা মাসুমা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন। তাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনকে আসামি করা হয়।

আসামির তালিকায় তৌফিক ইলাহীর নাম না থাকলেও সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

তাকে সুমন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক রেজাউল আলম।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, গত ১৯ জুলাই সুমন তার কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা ১২টার দিকে উত্তর বাড্ডা ফুজি টাওয়ারের উত্তর পাশে প্রগতি সরণীর রাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এই আন্দোলনকে দমন করতে আসামিরা নিজেদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে সুমন নিহত হন।

রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনায় তৌফিক ইলাহীর সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে আরও ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই ঘটনায় অন্য আসামিদের সম্পৃক্ততা এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

তৌফিক ইলাহীর পক্ষে তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

অন্যদিকে রিমান্ডের আদেশ চেয়ে শুনানি করেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তবে সেই শুনানিতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ের চেয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা হিসাবে তৌফিক ইলাহীর ভূমিকা নিয়েই বেশি কথা হয়।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তৌফিক ইলাহী। সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তিনি মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে যুক্ত ছিলেন।

বীর বিক্রম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক ইলাহী পল্লীকবি জসীম উদদীনের মেয়ে আসমা তৌফিকের স্বামী। ২০০২ সালে সচিব হিসাবে অবসর নেওয়া তৌফিক ইলাহী ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছিলেন।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা করেন। এক মাস আগে সরকার পতনের আগ অবধি মন্ত্রীর মর্যাদায় সেই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

রিমা্ন্ড শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তৌফিক ইলাহী বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছেন। উপদেষ্টা হিসাবে তিনি নানা ‘কুপরামর্শ’ দিতেন শেখ হাসিনাকে।

বিএনপি সমর্থক এই আইনজীবী বলেন, “তিনি বিদ্যুৎখাত নিয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, যেন চাইনিজ খেলনা। চাইনিজ খেলনা দেখতে সুন্দর, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী না। দেখতে লোভনীয় কিন্তু টাইম ভ্যালু নেই, টেকসই না। এভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। দেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছেন।”

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া নিয়েছিল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ছিল।

অভিযোগ ছিল, সরকারের কাছের ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে সেখান থেকে সরকার উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনত।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হত, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এই প্রক্রিয়ার বিকল্প ছিল না। আর এই প্রক্রিয়া নেওয়ার কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়।

ভাড়াভিত্তিক বা কুইক রেন্টালের নামে অনেককে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বানানো হয়েছে দাবি করে ওমর ফারুক উদাহরণ হিসাবে অটবি গ্রুপ, সামিট গ্রুপের কথা বলেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার সঠিক সমাধান না করে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চমক দেখিয়ে এ খাতকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ‘অসম’ চুক্তির জন্যও তৌফিক ইলাহীকে দায়ী করেন এই আইনজীবী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদনে মামলার এজাহারে তৌফিক ইলাহীর নাম না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।

হার্ভার্ড উইনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রিধারী তৌফিক ইলাহী ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে তার অসুস্থতার প্রসঙ্গও টানেন আইনজীবী। এজন্য জামিন দিতে আদালতকে অনুরোধ করেন তিনি।

দুই পক্ষের শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আলী হায়দার আসামি তৌফিক ইলাহীকে চার দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশকে অনুমতি দেন।

তার আগে তিনি বলেন, “বিবেক যখন মরে যায়, তখন শিক্ষার কোনও মূল্য থাকে না, যেকোনও কিছু করতে পারে। সরকারি দায়িত্ব পালনে আমাদের অবস্থান ঠিক রাখতে হবে।”

তৌফিক ইলাহী যেন নিরাপদে আদালত থেকে বের হতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন বিচারক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত