Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

টি-টোয়েন্টির ‘ট্রেন্ড সেটার’ হৃদয় !

হৃদয় ১
[publishpress_authors_box]

বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। পাওয়ার হিটিংয়ের বিশ্বাসটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনুপস্থিত। ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক, যত কঠিনই থাকুক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাওহিদ হৃদয়ের মতো টানা তিন ছক্কা মেরে দেয়ার বিশ্বাস কোন ব্যাটারের আছে কি! নেই। আর সে কারণেই চলে নানা তর্ক। সেই তর্ক শেষে শব্দ বিনিময় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না, পাওয়ার হিটারের অভাব থেকেই যায়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হৃদয়ের ২০ বলে ৪০ রানের ইনিংসকে বিশ্বাস জাগানিয়া বলেছেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তার মতে, “হৃদয় যে তিনটি ছক্কা মারল এটা একটা ট্রেন্ড সেটিং। এটা বললাম, কারণ (ব্যাটারদের) তো ওই বিশ্বাস নেই যে আমরা এমন খেলতে পারি। হৃদয় সেই ট্রেন্ডটা সেট করে দিল।”

বিশ্বমানের পাওয়ার হিটার

হৃদয়কে একদম বিশ্ব মানের পাওয়ার হিটারদের মতোই দেখছেন ফাহিম। বাংলাদেশে এমন আরও কয়েকজন আছেন যারা বড় শট খেলতে পারেন। কিন্তু হৃদয়ের মানটা ফাহিমের কাছে ভিন্ন। এর কারণ হৃদয়ের মাঝে আছে দুটো বিষয়, “ এখানে দুটো ব্যাপার। একটা হলো স্কিল। আরেকটা হলো কর্তৃত্ব করার মনোভাব। হৃদয়ের মধ্যে এই দুটোই আছে।”

উদাহরণ দিয়ে ফাহিম বলেছেন, “আমি এখানে সাহসের কথা বলছি না। ব্যাপারটা হলো যে ১০টা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরের থেকে একজন বিশাল শরীরের রংবাজ এসে হম্বিতম্বি করছে। ওই সময় ১০ জনের মধ্যে একজন চিকনা-পটকা ছেলে গিয়ে তাকে বলল, আপনি কি চান। এটা হল কর্তৃত্ব করার মনোভাব। এটা হৃদয়ের মধ্যে আছে।”

হৃদয়ের ব্যাট সুইং বাংলাদেশের আর যে কারও চেয়ে দ্রুত। ছবি : ক্রিকইনফো

হৃদয়ের ওই ইনিংসটিকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ বলেও সম্বোধন করলেন ফাহিম। কিন্তু তার বিশ্লেষণে বিশ্ব মানের পাওয়ার হিটাররা এমনই হয়, “ওই মুহূর্তে ওই রকম খেলায় কতটা ঝুঁকি ছিল, এটা একটু ভেবে দেখা যায়। যদি প্রথম শটটা ব্যাটে ঠিকঠাক না লেগে টপ এজ হয়ে যেত তাহলে কি অবস্থা হতো! ওকে কত কথা শুনতে হতো। ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বা আরও কত কিছু। আসলে আমাদের কালচারে এ জিনিসটা আছে। কেউ যদি চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয় তাহলে ওদেরকে কোনঠাসা করে ফেলি।”

হৃদয়ের আরও একটি ব্যাপার ভালো লেগেছে ফাহিমের। আগে থেকেই বোলারকে পড়তে পারা, “হৃদয় শেষের ছক্কার বলটা ভালো অনুমান করেছে। বুঝতে পেরেছে যে পরের বলটা বোলার কি করতে পারে। তাই আগে থেকে তৈরি হয়েছিল। আসলে হৃদয়ের মতো ক্রিকেটাররা শক্ত বিপক্ষের সামনেও খেলাটা পরিবর্তন করে না। এটা আসলে পুরোপুরি মাইন্ডসেট।”

ম্যাক্সওয়েলরা যেমন খেলেন

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১২৮ বলে ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংসটির কথা কারও ভোলার নয়। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে দলকে হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু একই ম্যাক্সওয়েলের গত আইপিএল কেটেছে একদম বাজে। কত ম্যাচে শুরুর কয়েক বলেই আউট হয়েছেন।

তবুও ম্যাক্সওয়েলদের মান অনেক উঁচুতে। তার কারণ ওই কর্তৃত্ব করার মনোভাব। ফাহিম বলেছেন, “আমরা যদি ম্যাক্সওয়েলের কথা বলি, সে কিন্তু এখনও তার মতোই খেলে। সে প্রথম বলেই আউট হয় কিন্তু একই রকম খেলে এবং একদিন ম্যাচ বের করে আনতে পারে। এই জিনিসটা হৃদয়রা করে ব্যর্থ হলে অনেক কথা হবে। কিন্তু ও (হৃদয়রা) যদি এই রকম ডমিনেটিং ইনিংস না খেলে অন্যরকম হয়ে যায়, তখন গড়পড়তা মানের ক্রিকেটার হয়ে যাবে।”

২০২৩ বিপিএলে সিলেটের হয়ে পুরো আসরে দারুণ ব্যাট করেছিলেন হৃদয়। ছবি : সংগৃহিত

বিপিএলের লাইসেন্স জাতীয় দলে পাবেন হৃদয়?

২০২৩ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলেছিলেন হৃদয়। ওই আসরেই বদলে যাওয়া হৃদয়কে দেখেছে বাংলাদেশ। এর আগের আসরে ১০ ম্যাচে ১৩৬ রান করেছিলেন। এরপর নিজের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। বড় শট নেয়ার জন্য ব্যাটের ব্যাক লিফট ঠিকঠাক করেছেন। ব্যাটিং স্ট্যান্স ও হেড পজিশনও ঠিক করেন। এরপরও একটা ধাক্কা দরকার ছিল। বিপিএলের সিলেট দল থেকে এই ধাক্কাটা পেয়েছেন।

ওই আসরে হৃদয়কে নিয়ে সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, “আমরা ওকে ওর মতো ছেড়ে দিয়েছি। সে প্রথম বলে ছক্কা মেরেছে। ওই বলে সে আউট হলেও আমরা কিছু বলতাম না। এভাবে পাশে থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে আমি যতক্ষণ আছি, সে তার মতও খেলার স্বাধীনতা পাবে।”

ওই আসরে সিলেটকে ফাইনালে তুলতে হৃদয়ের অবদান ছিল ১২ ম্যাচে ৪০৩ রান। এটা আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

হৃদয়ের মনোবল দৃঢ়। তাই ভুয়া কোচিংয়ে টাকা হারানোর ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন। ছবি : ক্রিকইনফো

ভুয়া একাডেমি থেকে সঠিক জায়গায় হৃদয়

ক্রিকেট শিখতে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা ছিল হৃদয়ের। কিন্তু চেষ্টা করেও পারেননি। পরে নিজ শহর বগুড়ার একজনের সহায়তায় ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন ২০১৩ সালে। মা গ্রামের জমি বন্ধক রেখে হৃদয়কে একাডেমিকে ভর্তি হওয়ার টাকা জোগাড় করে দেন বাবাকে না জানিয়ে। অথচ বগুড়া থেকে ঢাকা এসে হৃদয় দেখেন সেই একাডেমি ভুয়া। তখন হৃদয় ভাঙ্গার অবস্থা।

তবে মায়ের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেট ছাড়েননি। মা পাশে ছিলেন বলেই জাতীয় দলের ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পেরেছেন এই ব্যাটার। বারবারই স্বীকার করেন এই কথা। ২০২০ সালে যুব দলে ডাক পাওয়ার আগে হৃদয়কে হারিয়ে যেতে দেননি আরেকজন। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।

ভুল একাডেমি ভর্তি হওয়া এই ব্যাটারের খেলা তিনি দেখেছিলেন। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে আছেন বলে ক্রিকেটার স্কাউটিং করতে হয় সুজনকে। সে দায়িত্ব থেকেই কোন ভাবে তার চোখে পড়েন হৃদয়। রত্ন চিনতে ভুল করেননি সুজন । বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটারকেই তুলে আনার নায়ক হৃদয়কে সঠিক পথ দেখান।

হৃদয় যেন হারিয়ে না যান

হৃদয়ের কর্তৃত্বের মনোভাবটা হয়তো সেই প্রতারণার ভুল থেকেই পেয়েছিলেন। দৃঢ় মনোবলের শক্তিটাও এসেছে সেখান থেকে। নাজমুল আবেদীন ফাহিমের চাওয়া হৃদয় যেন নিজের এই এগিয়ে চলার ক্ষুধা ধরে রাখেন।  

বিরাট কোহলির উদাহরণ দিয়ে এই কোচ বলেছেন, “হৃদয়ের আরও ভালো হয়ে ওঠা ওর ওপর নির্ভর করবে। বিশ্বকাপ শেষেই দেখা যাবে হৃদয়কে নিয়ে সবাই গবেষণা শুরু করবে। এরকম যত কিছুই হোক হৃদয়কে তার মতো এগোতে হবে। বিরাট কোহলি এখনও এত ভালো করে কারণ তার সেই ক্ষুধা আছে। হৃদয়কেও সেই ক্ষুধাটা রাখতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত