ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এবং সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম ও কর ফাঁকির অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
দেশের কোন ব্যাংকে তাদের কেমন লেনদেন আছে, তাদের লেনদেনের বিপরীতে কোনও কর ফাঁকি আছে কি না—এসব তদন্ত করবে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।
সিআইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পাঁচ ব্যক্তির লেনদেনের তথ্য চেয়ে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তাদের স্থাবর সম্পত্তির তথ্যও অনুসন্ধান করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এর পর থেকে দেশের আর্থিক খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধান চলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট সিআইসি বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের আহমেদ আকবর সোবহান, সামিট গ্রুপের মুহাম্মদ আজিজ খান, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার ও ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিমের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির তদন্তে নামার কথা জানায়।
এর আগে ১৫ আগস্ট বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের সব সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব করে এনবিআরের কর অঞ্চল-১৫।
তাপসসহ পাঁচ ব্যক্তির আর্থিক অনিয়ম তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইসির মহাপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন ও কর ফাঁকির তদন্তের সিদ্ধান্ত আমাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই নেওয়া হয়েছে।
“দেশে বড় বড় আর্থিক অনিয়ম ও কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তির একটি তালিকা তৈরি করছে সরকার। এই পাঁচজন সেই তালিকাভুক্ত নন। আমাদের গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মূলত কর ফাঁকি ও অর্থ পাঁচার করেছেন কি না—তা তদন্ত করা হবে।”
জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারত চলে যান।
এরপর থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসের হদিস নেই। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ-সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর থাকার সময় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২১ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম চাপা দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে। এরপর ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই দুই কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করে এনবিআর।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট চাকরিচ্যুত হন একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ এবং প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ও প্রেজেন্টার ফারজানা রূপা। এরপর গত ২১ আগস্ট এই সাংবাদিক দম্পতি দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টার সময় বিমানবন্দরে আটক হন। পরদিন টঙ্গীর পোশাক শ্রমিক ফজলুল করিমকে হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং কয়েক দফায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ।