জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিদেশি চিকিৎসকদের উৎসাহ দিতে তাদের ফি, বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া ও আপ্যায়ন ব্যয়ের ওপর কর অব্যাহতি দিয়েছে সরকার।
বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বিদেশি চিকিৎসকগণের অনুকূলে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদেয় ফি, বাংলাদেশে অবস্থানকালীন হোটেলে থাকা, খাবার ব্যয় ও বিমান ভাড়া বাবদ অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ইহাদের ওপর আরোপনীয় কর এতদ্বারা অব্যাহতি প্রদান করিল।”
অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
আয়কর আইন অনুযায়ী কোনও বিদেশি বাংলাদেশে ছয় মাসের কম অবস্থান করে যে আয় করবেন তার ওপর সর্বোচ্চ আয়কর অর্থাৎ মোট আয়ের ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। আর কোনও বিদেশি বাংলাদেশে ছয় মাসের বেশি অবস্থান করে যে আয় করবেন তিনি সাধারণ বাংলাদেশির মতোই আয় অনুযায়ী আয়কর আদায় করবেন।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুসারে এক অর্থবছরে প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোনও কর দিতে হবে না। পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী তিন লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ এবং বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ১৩ হাজারের মতো আহত হয়েছে। তাদের অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। আহতদের বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে দেশের হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ারও চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে আহতরা গত শনিবার রাতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) বিক্ষোভ করে। পরদিনও দিনভর তাদের বিক্ষোভে শ্যামলীর সড়ক অচল ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসেও কাজ হচ্ছিল না। বরং তা উপেক্ষা করে রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে তারা। শেষে অভ্যুত্থানের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ গিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের কর্মসূচি থেকে ফেরান।
এই আহতরা গত নভেম্বরের শুরুতে অভিযোগ করেছিলেন, হাসপাতালগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছেন না তারা। এরপর গত ১৩ নভেম্বর নিটোর বা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। সেদিনও গভীর রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা সেখানে গিয়ে কথা বলে তাদের শান্ত করেছিল।
পরদিন ১৪ নভেম্বর সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈঠকে আহত ব্যক্তিরা সরকারের কাছ থেকে তাদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দাবি পূরণের আশ্বাস পান।
কিন্তু আড়াই মাস পর গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা গত শনিবার সন্ধ্যায় আবার রাজপথে নামেন। তাদের অভিযোগ ছিল, সরকার তাদের কোনও দাবিই মানেনি।
আহতদের চিকিৎসায় গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ জনের একটি চিকিৎসক দল এসেছে। এর আগে কয়েক মাসে থাইল্যান্ড, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স থেকে কয়েকটি চিকিৎসক দল তাদের চিকিৎসা দিতে আসে।